আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ ইসলামে মানবাধিকার একটি সুপ্রতিষ্ঠিত বিষয়। ইসলাম মানবতাকে গৌরব, শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার আসনে সমাসীন করেছে। ইসলাম মানুষকে সমান অধিকার, একতা, ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। ইসলামে বংশ মর্যাদা, শ্রেণিবিভেদ, জাতিগত বিভেদ ও বর্ণবিভেদ থেকে সতর্ক করেছে। দাস-দাসী ও অধীনস্থদের প্রতি সুন্দর ও ন্যায়ানুগ ব্যবহার শিক্ষা দিয়েছে।
সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। মানুষ হিসাবে সবাই সমান মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী। মৌলিক অধিকার সবার সমান। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার অধিকারও সবার জন্য সমান। ব্যক্তিস্বাধীনতাও সবার ক্ষেত্রে সমান। মর্যাদার দিক দিয়ে ইসলামে ধনী-গরিব সবাই সমান।
ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারও সবার ক্ষেত্রে এক। জানমালের নিরাপত্তার অধিকার একই। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অর্থাৎ বাকস্বাধীনতা সবার ক্ষেত্রে এক।
আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশ বছর আগে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) মানুষের মর্যাদা ও অধিকার সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করতে প্রাণপণ প্রচেষ্টা করে গেছেন। তিনি প্রচার করেছেন, তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হিসাবে বাছাই করা হয়েছে মানবের কল্যাণের জন্য। (সূরা আল-ইমরান, আয়াত ১১০)।
মানুষে মানুষে সাম্যের ধারণাটি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক নর ও নারী হতে’। (সূরা হুজরাত, আয়াত ১৩)। ইসলামের শান্তির বাণী শুধু নিজ ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং পরমত ও পরধর্মের প্রতি সহনশীলতা ও সহানুভূতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সম্প্র্রদায়ের লোকদের মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্যে গুরুত্ব দেন রাসূল (সা.)। রাসূল (সা.)-এর সময়কালে করা চুক্তিগুলো দেখলে সেটি বুঝা যায়। হিজরি ৬২৪ সালের ‘মদিনা সনদ’ মানবাধিকারের স্বীকৃতির জন্য বিখ্যাত। এ সনদে ৪৭টি ধারা ছিল। ধারাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-
১. মদিনা সনদে স্বাক্ষরকারী ইহুদি, খ্রিষ্টান, পৌত্তলিক ও মুসলমান সম্প্রদায়গুলো সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে এবং তারা একটি জাতি গঠন করবে। ২. পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকবে। মুসলমান ও অমুসলমান সম্প্রদায়ের লোকেরা বিনা দ্বিধায় নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে।
কেউ কারও ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। ৩. রক্তপাত, হত্যা, ব্যভিচার এবং অপরাপর অপরাধমূলক কার্যকলাপ একেবারেই নিষিদ্ধ করা হলো। ৪. দুর্বল ও অসহায়কে সর্বতোভাবে সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে। ৫. ইহুদিদের মিত্ররাও সমান নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা ভোগ করবে।
তা ছাড়া নবুয়্যতের আগে হজরত আব্বাস (রা.)-সহ অন্যদের নিয়ে গঠিত হিলফুল ফুজুল ছিল বর্ণবাদে আক্রান্ত অন্ধকার আরবে মানুষের স্বাধীনতা ও বেঁচে থাকার অধিকারের স্বীকৃতির কালজয়ী একটি আন্দোলন।
রাসূল (সা.) তার বিদায় হজের ভাষণে অন্যান্য অধিকারের পাশাপাশি দাস-দাসীদের অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ‘মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই সমান।’ তিনি বলেন, ‘কোনো আরবের ওপর অনারবের প্রাধান্য নেই। প্রাধান্য নেই কোনো অনারবের আরবের ওপর। সাদা মানুষের প্রাধান্য নেই কালো মানুষের ওপর। রাসূল (সা.)-এর ওফাতের পর এ ধারা অব্যাহত ছিল। যেমন হজরত আবু বকর (রা.) তার প্রথম ভাষণে বলেন, ‘আমি সৎপথে থাকলে আপনারা আমাকে সাহায্য করবেন এবং সমর্থন জোগাবেন, আর বিপথগামী হলে উপদেশ দিয়ে পথে আনবেন।
হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনকালেও প্রত্যেক পুরুষ ও মহিলার পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিশ্চিত ছিল। শাসনসংক্রান্ত ব্যাপারে তারা তাদের নিজস্ব অভিমত, অভিযোগ, বিকল্প প্রস্তাব ইত্যাদি পেশ করতে পারতেন। মানুষের সম্মান কোনো বর্ণ-গোত্র দ্বারা নির্ধারিত হবে না। বরং আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা বা তাকওয়া নির্ধারণ করবে ব্যক্তির মর্যাদা। যেমন কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাবান হলো যারা তাকে ভয় করে।’ (সূরা আল হুজরাত)।
সমাজে মর্যাদার সঙ্গে বসবাস এবং জানমালের হেফাজত হচ্ছে একজন মানুষের সামাজিক অধিকার। ইসলাম কাউকে কারও মর্যাদা হরণ ও অন্যায়ভাবে হত্যার অনুমোদন দেয় না। আল্লাহ বলেন, ‘অন্যায়ভাবে কেউ যদি কাউকে হত্যা করে, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল।