আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ শ্রেণিকক্ষে মাঝামাঝি চেয়ারে বসা শিক্ষিকা। এক পাশে মেঝেতে শিক্ষার্থীরা বসা, অন্য পাশে এক শিশুশিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে। দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীকে এক এক করে চড় মারতে বলছেন শিক্ষিকা ত্রীপ্তা তিয়াগী। এক এক করে উঠে আসছে, দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীকে মারছে।
ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগরের একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে। জানা গেছে, দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থী মুসলিম সম্প্রদায়ের। শিক্ষিকার চোখে এটাই তার ‘অপরাধ’। তাই অঙ্ক ভুল করায় তিনি ওই শিক্ষার্থীকে সহপাঠীদের দিয়ে মার খাইয়েছেন। অপমান করেছেন। মুসলিমবিদ্বেষী কথা বলেছেন।
তিয়াগী ওই বিদ্যালয়ের মালিক ও প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়টিতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। এ ঘটনায় স্থানীয় মনসুরপুর থানার পুলিশ ও শিক্ষা বিভাগ তদন্তে নেমেছে।
এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, ভুক্তভোগী শিশুটি এক পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে আর শিক্ষিকা তৃপ্তি অন্য শিশুদের একে একে উঠে এসে ওই শিশুকে চড় মারতে নির্দেশ দিচ্ছেন।
আরো পড়ুনঃএশিয়া কাপে লিটন খেলবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কা
ভিডিওটিতে শিক্ষিকা তিয়াগীকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি বলে দিয়েছি, সব মুসলিম বাচ্চারা, অন্য কারো এলাকায় যাও।’
এক সহপাঠী ওই শিক্ষার্থীকে চড় মারার পর শিক্ষিকা তিয়াগী বলেন, ‘তুমি এটা কীভাবে মারছ? জোরে মারো।’ এরপর তিনি বলেন, ‘এরপর কে আছ? পরের জন এসে চড় মেরে যাও।’
যখন শিশুটি কান্না করা শুরু করে তখন শিক্ষিকা তিয়াগী বলেন, ‘চড় খেয়ে ওর মুখ লাল হয়েছে গেছে। মুখে আর মেরো না। এবার কোমরে মারো।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে। এরপর বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে অভিযুক্ত শিক্ষিকা দাবি করেছেন, এ ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ওই শিক্ষার্থী হোমওয়ার্ক না করায় অন্য শিক্ষার্থীদের দিয়ে তাকে চড় মারিয়েছেন।
তিনি আরও দাবি করেছেন, তিনি শারীরিকভাবে অক্ষম। এ কারণে নিজে না মেরে ক্লাসের অন্যান্য শিক্ষার্থীকে দিয়ে ওই ছাত্রকে শাসন করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘তার প্রতি কঠোর হতে তার বাবা-মায়ের কাছ থেকেও চাপ ছিল। আমি শারীরিকভাবে অক্ষম। তাই অন্য ছাত্রদের দিয়ে আমি তাকে চড় মারিয়েছি যেন সে তার হোমওয়ার্ক করে।’
এই শিক্ষিকা দাবি করেছেন, ভিডিওটি এডিট করা হয়েছে এবং বিষয়টিকে একটি সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়া হয়েছে। ‘তার চাচাত ভাইও ক্লাসে উপস্থিত ছিল। ভিডিওটি তার ভাই-ই ধারণ করেছে এবং পরবর্তীতে বিকৃত করা হয়।’ দাবি করেন তিয়াগী।
তিনি বলেছেন, এমন কাণ্ড ঘটিয়ে তিনি ভুল করেছেন এ বিষয়টি স্বীকার করে নিচ্ছেন। কিন্তু এটিকে এত বড় করা হচ্ছে যা ঠিক নয়।
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, শিশুটির বাবা-মা প্রথমে ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে রাজি হননি। কিন্তু শনিবার তার বাবা একটি এফআইআর দায়ের করেছেন।
ছাত্রটির বাবা জানিয়েছেন, তার ছেলেকে ওই শিক্ষিকা এক থেকে দুই ঘণ্টা নির্যাতন করেছে। এতে সে অনেক ভয় পেয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, নিজের ছেলেকে আর ওই স্কুলে পাঠাবেন না।
এদিকে এ ভিডিও নিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীসহ অনেক রাজনৈতিক নেতা টুইট করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘নিরীহ শিশুদের মনেও বৈষম্যের বিষ বপন করা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের মতো পবিত্র একটি জায়গাকে ঘৃণার বাজারে পরিণত করা হয়েছে। একজন শিক্ষক দেশের জন্য এর চেয়ে খারাপ আর কিছু করতে পারেন না। ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার এই একই কেরোসিন ছড়িয়ে দেশের প্রতিটি কোনায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
রাহুল গান্ধী আরও লেখেন, ‘শিশুরা ভারতের ভবিষ্যৎ; তাই শিশুদের ভালোবাসার বার্তা শেখাতে হবে, ঘৃণা নয়।’