পৃথিবী থেকে বহু প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ডাইনাসর থেকে শুরু করে ডুডু পাথি । আরও বহু প্রজাতি রয়েছে বিলুপ্তের পথে। ব্রিটিশ ফটোগ্রাফার টিম ফ্ল্যাচ খুঁজে বেড়িয়েছেন বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীদের। এসব প্রাণীর ছবি তুলেছেন তিনি। সবাইকে দেখাতে চেয়েছেন পৃথিবী কি হারাতে চলেছে। বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীর ছবি নিতে টিম দুই বছরেরও বেশি সময় পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এদের অনেকের লুপ্ত হওয়ার প্রধান কারণ মানুষই। মানুষ বনাঞ্চল ধ্বংস করে লোকালয় নির্মাণ করছে। চোরা শিকারি ও প্রাণীর অবৈধ বাণিজ্যের কারণে ব্যাহত হচ্ছে তাদের স্বাভাবিক বংশবৃদ্ধি। একই সঙ্গে রয়েছে পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন।
সাইগা অ্যান্টিলোপ কাজাখাস্তানের বিস্তীর্ণ স্টেপ অঞ্চলে এ বিচিত্র প্রাণীটার বসবাস। আগে ইউরোপ ও এশিয়ার উত্তরাঞ্চলে এরা বিশাল সংখ্যায় বিচরণ করতো। বর্তমানে এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে আসছে। কাজাখাস্তানের সংরক্ষিত অঞ্চলে আর মাত্র ৩৩টি সাইগা অ্যান্টিলোপ আছে বলে জানা যায়।
ফিলিপাইন ঈগল ফিলিপাইনের জঙ্গলে বাস করে এ অদ্ভুত সুন্দর পাখি। এদের ফিলিপাইন ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না। এদের আকৃতিও বিশাল, লম্বায় সাড়ে তিনফুট, ওজন আট কেজি। এরা বানরখেকো ঈগল নামেও পরিচিত। এরা গাছ থেকে বানর শিকার করে খেতে বেশ পটু। বর্তমানে এ ঈগল পৃথিবীর মহাবিপন্নের তালিকায় নাম লিখিয়েছে।
আইবেরিয়ান লিনক্স বিড়াল প্রজাতির এ প্রাণীর বসবাস দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের আইবেরিয়ান পেনিনসুলা অঞ্চলে। ২০০০ সালের শুরুতে জরিপ চালিয়ে দেখা যায় পৃথিবীতে মাত্র ১০০টি আইবেরিয়ান লিনক্স রয়েছে। ২০০২ সালে প্রাণীটি সংরক্ষণের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১২ সালে এদের সংখ্যা বেড়ে ৩২৬টিতে পৌঁছেছে।
রেড পান্ডা নাম লাল পান্ডা হলেও পান্ডার সঙ্গে এর খুব কমই মিল। এদের দেখতে পাওয়া যায় মূলত হিমালয় অঞ্চলে এবং দক্ষিণ চীনে। এদের সংখ্যা কমে আসার প্রধান কারণ- বাসস্থান ধ্বংস, চোরাশিকারির উৎপাত ও প্রজননে অনাগ্রহ। বর্তমানে এদের সংখ্যা ১০ হাজারেরও কম বলে ধরা হয়।
পাইড ট্যামারিন বিচিত্র এ প্রাণীটা দেখলে মনে হবে যেন কোনো কল্পকাহিনী থেকে উঠে এসেছে। ব্রাজিলের অ্যামাজন রেইনফরেস্টের দূরবর্তী অঞ্চলে এদের পাওয়া যায়। গাছের ফল ও পোকামাকড় খায় এরা। বন উজাড় করে মানুষের বসতি স্থাপনের কারণে এরা বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
লিমুর বনমানুষ গোত্রের প্রাণী। একমাত্র আফ্রিকান দ্বীপ মাদাগাস্কারে এদের দেখা যায়। ধারণা করা হয়, লিমুর আফ্রিকা থেকে ভেসে ভেসে মাদাগাস্কার দ্বীপে উপস্থিত হয়। এরপর মাদাগাস্কার অনুকূল পরিবেশে বংশবিস্তার করে।
প্যাঙ্গোলিন গ্রীষ্মপ্রধান বনাঞ্চলের স্তন্যপায়ী প্রাণী প্যাঙ্গোলিন। ভারত, বাংলাদেশ, চীন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে এদের পাওয়া যায়। প্যাঙ্গোলিনের আঁশ প্রথাগত চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এ কারণে প্রাণীটি বর্তমানে বিপন্ন প্রায়। চীনা গবেষকদের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পাচার হওয়া প্রাণী প্যাঙ্গোলিন।
বিলুপ্তের পথে সকল প্রাণী রক্ষায় আমাদের বন উজার ও পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে হবে । নইলে অচিরেই সকল প্রাণী অস্তিত্ব একদিন শেষ হয়ে যাবে।