আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ বোম্বের দিলীপ কুমার-মধুবালা কিংবা কলকাতার উত্তম-সুচিত্রার মতো ঢাকাই ছবিও জন্ম দিয়েছে অনেক সফল জুটি। তাঁদের মধ্যে কোনো কোনো জুটি পাঁচ–সাতটি ছবি করেই দর্শক মনে ঠাঁই করে নিয়েছেন। জনপ্রিয় এসব জুটির ছবি দেখতে একসময় মুখিয়ে থাকতেন দর্শক। শুধু জুটির নামেও সফল হতো চলচ্চিত্র।
লোককাহিনিনির্ভর চলচ্চিত্রে আজিম ও সুজাতা ছিলেন অনন্য। সামাজিক ও পারিবারিক গল্পে যেমন রাজ্জাক–কবরী। গ্রামীণ কাহিনির চলচ্চিত্রে ফারুক-কবরীর জুটিও পেয়েছিল অন্য মাত্রার জনপ্রিয়তা। আবার সুচন্দা, ববিতা, শাবানা-এই তিনজনের সঙ্গেই দর্শকনন্দিত হয়েছে রাজ্জাকের জুটি। অন্যদিকে রাজ্জাক ছাড়াও ফারুক, উজ্জ্বল ও জাফর ইকবালের সঙ্গে ববিতার জুটি সফল হয়েছে।
১৯৯১ সালে চাঁদনী চলচ্চিত্রের মাধ্যমে শাবনাজ-নাঈম জুটিকে উপহার দেন এহতেশাম। নতুন এই জুটিকে সাগ্রহে গ্রহণ করে তরুণ প্রজন্ম। দুই বছর পর সোহানুর রহমান সোহানের কেয়ামত থেকে কেয়ামত মুক্তি পাওয়ার পর সালমান শাহ-মৌসুমী জুটি আগের অনেক জুটির জনপ্রিয়তা ছাপিয়ে যায়। পরে শাবনূরের সঙ্গে জুটি বাঁধেন সালমান শাহ। তুমুল জনপ্রিয়তা পায় এই জুটি। ঢালিউডে সর্বশেষ জুটি শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। এক দশক ধরে ৭০টির বেশি ছবিতে তাঁরা জুটি হয়েছেন। পরে চলচ্চিত্র ও জীবনে দুই ক্ষেত্রেই ভেঙে যায় এই জুটি। তারপর আর দর্শকপ্রিয় জুটি পাওয়া যাচ্ছে না। কেন?
পরিচালক মতিন রহমান মনে করেন, জুটি গড়ে ওঠার পেছনে পরিচালক ও গল্পকারদের বড় একটা ভূমিকা থাকে। এরপর নায়ক-নায়িকার অভিনয়, পর্দায় দুজনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া যদি সমপরিমাণ থাকে-তাহলে দর্শকই বুঝে নেন তাঁরা জুটি। কিন্তু একজনের অভিনয় পছন্দ হচ্ছে কিন্তু আরেকজনকে তাঁর প্রতিক্রিয়ার জন্য ভালো লাগছে না, তখন তাঁদের আর জুটি বলা যায় না। একসঙ্গে অভিনয় করছেন ঠিকই, কিন্তু দর্শক তাঁদের জুটি ভাবতে পারছেন না।
জুটির আবেদন সারা পৃথিবীতে আছে, এ আবেদন কখনো ফুরোবার নয় উল্লেখ করে মতিন রহমান বললেন, ‘জুটি প্রথায় সিনেমা হিটও হয়। আমাদের দেশে যে জুটি প্রথা গড়ে উঠেছিল, এখন সেটা পতনের দিকে। কারণ হতে পারে মনোযোগ ও অনুশীলনের অভাব। পরিচালকেরাও হয়তো ঠিকমতো তাঁদের উপস্থাপন করতে পারছেন না। আর প্রযোজকেরা হয়তো সেভাবে জুটিকে পছন্দ না করে একজন সুপারস্টারকে নিয়ে সিনেমা করছেন।
অভিনয়শিল্পী ও পরিচালক কোহিনুর আক্তার সুচন্দা জানালেন, জুটি প্রথা গড়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন একজন ভালো পরিচালক ও গল্পকার। একই সঙ্গে পাত্র–পাত্রীও গুরুত্বপূর্ণ, যাঁদের অভিনয় দর্শক গ্রহণ করেন। দর্শক সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে সেই নায়ক-নায়িকা সম্পর্কে যখন কথা বলবেন তখনই বুঝতে হবে, সেই পাত্র–পাত্রীকে দর্শক গ্রহণ করেছেন। তখনই জুটি তৈরি হবে।