বাংলাদেশে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাওয়াটা আকাশ কুসুম রচনা করার মতই। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে অনশনে নেমেছেন এক প্রতিবন্ধী নারী।
পায়ে জোর নেই, চলেছেন হেঁটে। কঠিন জীবন, তবু মানেননি বাঁধা। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ, এরপর উচ্চশিক্ষা। সবই পার করেছেন সাফল্যের সঙ্গে। কিন্তু আর পেরে উঠছেন না। পড়ালেখা শেষ করে জীবন গড়ার জন্য দরকারি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেননি।
স্বপ্ন ছিল সরকারি চাকরি করবেন। এজন্য সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েছেন। তার এ পথচলা আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো সহজ ছিল না। শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কারণে পদে পদে বাধা এসেছে। কিন্তু দমে যাননি।
এবছরই তার সকারি চাকরির বয়স শেষ। অনেক চেষ্টা করেও চাকরি পাননি তিনি। কিন্তু ২০১৩ সালে ইডেন কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
এরপর থেকেই একটি সরকারি চাকরির জন্য ছুটে বেড়িয়েছেন। কিন্তু চাকরি হয়নি।তিনি শিশু বয়স থেকেই প্রতিবন্ধী। তাই আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হুইল চেয়ারে বসে তিনি আমরণ অনশনে নেমেছেন।
তার হুইল চেয়ার ঘিরে রয়েছে ২০টির মতো প্ল্যাকার্ড। জাতে লেখা আছে বিভিন্ন বার্তা। গলায় ঝুলছে, ‘আমি আমার মা প্রধানমন্ত্রীর ভালোবাসা চাই। তার সঙ্গে দেখা করতে চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড।
এই ব্যাপারে তিনি বলেন, সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি। অর্জন করেছি প্রথম বিভাগ। শুধু তাই নয়, পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলেছি।
ভাড় উত্তোলন থেকে শুরু করে টিভি-রেডিওতে সংবাদ পাঠ; টিভি প্রোগ্রাম গ্রন্থনা, উপস্থাপনা ও পরিচালনা; নাটক, গল্প ও কবিতা লেখা; অভিনয় করা ও কবিতা আবৃতি করা;
গল্প বলা; ছবি আঁকা এবং কম্পিউটারে সকল কাজের অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছি।তিনি আরও বলেন, রাজশাহী মাদার বক্স গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে অনার্স পড়েছি। পঞ্চম তলায় ক্লাস হতো।
অন্যসব ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজে আসতেন ৯টার দিকে। অথচ আমাকে কলেজে যেতে হতো সকাল ৭টার দিকে। কারণ হাতে ভর দিয়ে পঞ্চম তলায় উঠতে দের ঘণ্টার মতো সময় লেগে যেত।
আর এ বছরই সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেল, তাই বাধ্য হয়ে আমরণ অনশনে বসতে হলো।
শুধু একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে স্কুল জীবন থেকে শুরু করে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন পর্যন্ত হাজারো বাধা পেরিয়েছি, প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছি, এরপর যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরির জন্য বহু চেষ্টা করেও চাকরি পাইনি।