আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)। খ্যাতিমান সাহাবি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন সঙ্গী। ইসলামী ইতিহাসের অনন্য তারকা।
প্রেমাস্পদ রাহমাতুল লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাতেগড়া শিষ্য। নিজের চিন্তা চেতনায় মনন মানসিকতায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শকে ধারণ করেছেন অত্যন্ত গভীরভাবে। আমৃত্যু সে আদর্শের ফেরি করে গেছেন পরম ভালবাসায়। জ্ঞানের রাজ্যের মুকুটহীন সম্রাট এই মহান মানুষটি উম্মাহর বরিত শিক্ষক হিসেবে অমর হয়ে আছেন ইতিহাসের বর্ণিল পাতায়।
জ্ঞানসম্রাট আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘নিশ্চয়ই সত্যবাদিতা নেক তথা কল্যাণের দিকে পথনির্দেশ করে। আর কল্যাণ ব্যক্তিকে জান্নাতের পথে পরিচালিত করে। একজন ব্যক্তি সত্য বলতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। এভাবে সে আল্লাহর কাছে সিদ্দিক তথা সত্যবাদীরূপে পরিগণিত হয়। পক্ষান্তরে মিথ্যা গুনাহ তথা অকল্যাণের দিকে আহবান করে ।আর গুনাহ ব্যক্তিকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। ব্যক্তি মিথ্যায় অভ্যস্ত হয়ে আল্লাহর দরবারে মিথ্যুক হিসেবে পরিগণিত হয়ে যায়।
হাদিসের বার্তা সুস্পষ্ট। সত্যবাদিতা কল্যাণের পথনির্দেশক। একজন সত্যবাদী মানুষ সর্বক্ষেত্রেই প্রশংসিত। সবার কাছেই সমাদৃত। সত্যবাদী মানুষের জীবন হয় ফুলের মত সুরভিত।তার জীবনজুড়ে সত্যের সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে। পবিত্রতার আবেশে সত্যবাদীর জীবন হয় ষোলকলায় পূর্ণ।
পক্ষান্তরে মিথ্যা অকল্যাণের বার্তাবাহক। একজন মিথ্যাবাদী সর্বমহলেই ঘৃণিত। মিথ্যার দুর্গন্ধে তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। অপমান ও লাঞ্ছনার সাগরে সে হাবুডুবু খেতে থাকে প্রতিনিয়ত।
সত্যবাদী সব স্থানেই নন্দিত। কুরআন মাজিদে সত্যবাদীদের প্রশংসা করা হয়েছে। তাদের সান্নিধ্য অবলম্বনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
হাফেজ ইমাদুদ্দীন ইসমাঈল ইবনে উমর ইবনে কাসির (রহ.) এই আয়াতের তাফসিরে উল্লেখ করেন- আয়াতের বার্তাটি হচ্ছে, ‘তোমরা সত্যবাদিতাকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর। সত্যবাদীদের সান্নিধ্য অবলম্বনে যত্নবান হও। এতে করে তোমরা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে। আল্লাহ তোমাদের কাজগুলোকে সহজ করে দিবেন। উন্নতির দ্বার সমূহ তোমাদের জন্যে উন্মুক্ত করে দিবেন।
আমরা সকলেই আমাদের জীবনকে সাজাতে চাই। কর্মের দীপ্তি আর সফলতার স্নিগ্ধ আলোয় উদ্ভাসিত হতে চাই সবাই। কিন্তু না, এলোমেলো অগোছালো হয়ে যায় আমাদের যাপিত জীবন। শত পরিকল্পনাও ভেস্তে যায় কখনো কখনো। বিশৃঙ্খলতার জাল থেকে যেন আমরা বের হতেই পারি না।
এই এলোমেলো অগোছালো জীবনকে সাজাতে, কর্মে আর সফলতায় ঔজ্জ্বল্য আনতে, সর্বোপরি উন্নত ও পবিত্র জীবন যাপন করতে সত্যবাদিতার বিকল্প নেই। সত্যবাদিতাকে আঁকড়ে ধরুন। দেখুন আপনার প্রতিটি কাজ কী গোছালো এবং সূচারোরুপে সম্পন্ন হচ্ছে। সত্যবাদিতা আপনার হৃদয়ে কী এক পবিত্র স্নিগ্ধ আবেশ ছড়িয়ে দিচ্ছে।
পবিত্র কুরআন মাজীদের নির্দেশনা কত অসাধারণ! ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য সঠিক কথা বল। তাহলে আল্লাহ তোমাদের কার্যাবলী শুধরে দিবেন এবং তোমাদের পাপরাশী ক্ষমা করবেন।যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে সে মহা সাফল্য অর্জন করল।
এই আয়াত দুটির ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে কাসির রহ. তার তাফসির গ্রন্থে বলেন- ‘যারা সত্য কথা বলবে আল্লাহ তাদের সকল কাজ সংশোধন করে দিবেন। তাদের প্রতিটি কাজ হবে গোছালো এবং সূচারুরুপে সম্পাদিত। আল্লাহ সত্যবাদীদেরকে অধিক পরিমাণে নেক কাজের তাওফিক দান করবেন। তাদের অতীত গোনাহ ক্ষমা করে দিবেন। ভবিষ্যতে কোন গোনাহ সংগঠিত হয়ে গেলে তাওবার সুযোগ করে দিবেন।
মানবেতিহাসের শ্রেষ্ঠ পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় মানুষ হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মানবীয় প্রতিটি গুণ পূর্ণতা পেয়েছিলো তার পবিত্র অস্তিত্বে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সেসকল হৃদয়কাড়া অসাধারণ গুণাবলীর মাঝে অন্যতম সেরা গুন ছিল সত্যবাদিতা। ঘোরতর বিরোধীরাও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সত্যবাদিতা ও বিশ্বস্ততার উপর প্রশ্ন তোলার দুঃসাহস দেখাতে পারেনি।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সত্যবাদিতা ও বিশ্বস্ততায় মুগ্ধ হয়ে মক্কা মুকাররামার আবাল বৃদ্ধ বনিতা পরম ভালোবাসায় তার উপাধি দিয়েছিল ‘আস সাদিক’ (সত্যবাদী) ‘আল আমিন’ (বিশ্বস্ত)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র জীবনীতিহাস নিয়ে রচিত সৌরভময় সিরাতগ্রন্থগুলোর পাতায় পাতায় তার সত্যবাদিতা ও বিশ্বস্ততার মনোমুগ্ধকর অসাধারণ গল্পগুলো হৃদয়ে পবিত্রতার আবেশ ছড়িয়ে দেয়।
সত্যবাদিতা পবিত্র জীবন যাপন করার মৌলিক ভিত্তি। সত্যবাদী ব্যক্তি আত্মমর্যাদাশীল হয়। ফলে সে বহু অনৈতিক ও অন্যায় কাজ থেকে অনায়াসেই বেঁচে থাকে।
একজন সত্যবাদীর জীবন হয় ফুলের মতো সৌরভময়। ফুল যেমন তার হৃদয়কাড়া সুরভী দিয়ে চারপাশটা মোহিত করে রাখে তদ্রুপ একজন সত্যবাদী মানুষ সত্যবাদিতার সৌরভ ছড়িয়ে পরিবার সমাজকে মোহিত করে রাখে। এভাবে সে দুনিয়ায় সৃষ্টির কাছে এবং আখেরাতে স্রষ্টার কাছে সম্মানজনক মর্যাদাপূর্ণ ঈর্ষনীয় জীবন লাভে ধন্য হয়।