জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ বুধবার। গাজীপুরের পিরুজালীতে অবস্থিত নুহাশপল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত, কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কোরআনখানি, মিলাদ মাহফিলসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তার মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। নানা বয়সি হুমায়ূন ভক্ত সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত প্রিয় লেখকের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করে নুহাশ পল্লীতে।
বুধবার রাত ১২টা ১ মিনিটে গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে হুমায়ুন আহমেদের হাতে গড়া নুহাশপল্লীতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে পুরো নূহাশপল্লীকে আলোকিত করেন নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। ভোর পাঁচটার দিকে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে সঙ্গে নিয়ে নুহাশপল্লীতে আসেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি দুই ছেলেকে নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ এবং কবরের পাশে সূরা ফাতেহাপাঠ, কবর জিয়ারত ও মোনাজাত করেন।
পরে মেহের আফরোজ শাওন সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে জানান, হুমায়ূন আহমেদের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে এসে সব সময় যে কথাটা আমার কাছে আসে সেটা হচ্ছে ক্যান্সার হাসপাতাল। ক্যান্সারের সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদ যখন যুদ্ধ করছিলেন তখন এ বিষয়ে একটা লেখা লিখেছিলেন। যেটা নিয়ে তখন অনেক হৈচৈ হয়েছে। শিক্ষা বিস্তারের ব্যাপারে হুমায়ূন আহমেদের একটা প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল। ওনার গ্রামে কোন মাধ্যমিক স্কুল ছিল না। সে হিসেবে তিনি তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়ার কুতুবপুরে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তার মায়ের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। এ স্কুলটির নাম শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপিঠ। হুমায়ূন আহমেদের ৭১তম জন্মদিনে সবচে বড় যে সুখবর সেটা হচ্ছে শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপিঠ স্কুলটি নিন্ম মাধ্যমিক পর্যন্ত এ বছর এমপিওভুক্ত হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদ মারা যাওয়ার পর সাতটি বছর এ স্কুলটি বিভিন্ন ধরণের ক্রান্তিকালের সম্মুখিন হয়েছে। আমার সাধ্য খুবই ছোট, কাঁধও খুব ছোট, এই ছোট কাঁধে যতটুকু সম্ভব দায়িত্ব নেবার চেষ্টা করেছিলাম। হুমায়ূন আহমেদের ভক্তরা তার কাছের মানুষেরা আমার পাশে ছিল, স্কুলের পাশে ছিল।
ক্যান্সার হাসপাতাল ও স্মৃতি যাদুঘর নির্মাণের ব্যাপারে মেহের আফরোজ শাওন বলেন, এটা খুবই দুর্ভাগ্য, ক্যান্সার হাসপাতালের কথাটা বারবারই আমি বলে আসছি। এটা অনেক বড় ব্যাপার। আমি প্রতিবারই বলি আমি করতে চাই। আমি একা পারছিনা। আমি দুর্ভাগ্যবান যে আমি একা এতবড় দায়িত্ব নিতে পারছি না। একটু একটু করে আগানোর চেষ্টা করছি। ক্যান্সার হাসপাতাল করা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। তারপর চেষ্টা করে যাব বড় বড় মানুষগুলোর কাছে। ক্যান্সার হাসপাতাল আর্থিক কারণে হচ্ছে না-এ বিষয়টা ঠিক না। এটার উদ্যোগটা নিলে অবশ্যই একটু একটু করে হলেও অর্থের সংকুলান হয়ে যাবে। এখন উদ্যোগটা নেয়াই সবচে বড় ব্যাপার। যা আমি একা নিতে পারছিনা। হুমায়ূন আহমেদ যে ক্যান্সার হাসপাতাল করতে চেয়েছিলেন সে স্বপ্নটা অনেক বড়। আসলেই পরিবারের সবাইকে একমত হয়ে শুরু করতে হবে, উদ্যোগটা নিতে হবে। আর হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতি যাদুঘর কোন জায়গায় হবে সে জায়গাও নির্ধারণ করা আছে। হুমায়ূন আহমেদ যে নুহাশপল্লীতে শায়িত আছেন সেই নুহাশপল্লীর ভিতরেই একটি জায়গা মনে মনে পছন্দ করে রেখেছি। যে জায়গায় হুমায়ূন আহমেদ অনেক হাঁটাহাঁটি করতেন অনেক লম্বা একটা জায়গা যেখানে গাছ কাটতে হবে না। আর হুমায়ূন আহমেদের হাতে লাগানো একটি গাছও যেন না কাটতে হয় সে বিষয়টি মাথায় রাখতে চেয়েছি। স্মৃতি যাদুঘরের জন্য জায়গা নির্ধারণ হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে এর একটি ডিজাইনও করা হয়েছে। যা আমি নিজেই করেছি।
তিনি বলেন, যাদুঘর করার ব্যাপারে পরিবারের সবার সম্মতির জন্য অপেক্ষা করছি। বিষয়টি হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সবাইকে জানানো হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই আমরা সম্মতি পাব এবং হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতি যাদুঘর নির্মাণ শুরু হবে।
জিয়ারত শেষে নুহাশপল্লীতে হোয়াইট হাউসের পাশে স্থাপিত হুমায়ূন আহমেদের ম্যুরালের সামনে আপেল তলায় হুমায়ূন আহমেদের ৭১তম জন্মদিনের কেক কাটেন তার দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিত। এসময় হুমায়ূন ভক্ত, গণমাধ্যমকর্মী ও নুহাশপল্লীর কর্মচারীরাসহ এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
জন্মদিন উপলক্ষে নুহাশপল্লীর ভাষ্কর আসাদুজ্জামান খান তার একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী করেন। এতে কাঠ দিয়ে তার তৈরী ৭১টি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক শিল্পকর্ম প্রদর্শন করা হয়। এটি তার একক চতুর্থ শিল্প প্রদর্শনী।
উল্লেখ্য, সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এরপর গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে তাকে সমাহিত করা হয়।