১৯৮০ সালে ‘দাদার কীর্তি’ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় পা রাখেন ভারতীয় বাংলা সিনেমার বরেণ্য অভিনেতা তাপস পাল। তারপর ‘সাহেব’, ‘পর্বত প্রিয়’-এর মতো সিনেমা উপহার দিয়ে দর্শক মনে জায়গা করে নেন এই শিল্পী। এর পরের গল্প কারো অজানা নয়। তথাকথিত নায়কের বাইরে সরল–শান্ত চেহারা আর অভিনয়দক্ষতা দিয়ে দর্শকমন জয় করেছিলেন ভারতের চলচ্চিত্র অভিনেতা তাপস পাল। আশি-নব্বই দশকে দুই বাংলাতেই তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে।
মঙ্গলবার ভোরে না ফেরার দেশে চলে গেছেন সবার প্রিয় তাপস পাল। টলিউড ইন্ডাস্ট্রির তারকাদের মধ্যে বিরাজ করছে শোকের ছায়া। প্রিয় অভিনেতার বিদায়ের বিষাদের ছায়া বাংলাদেশের তারকা অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতাদের মধ্যেও কম নয়। অভিনেতা মীর সাব্বির তার ফেসবুকে লিখেছেন—‘শ্রদ্ধা প্রিয় অভিনেতা তাপস পালকে। আমরা যখন অনেক ছোট, তখন তার অভিনয়ে মুগ্ধ হতাম। ভালো থাকবেন হে গুণী শিল্পী।
তাপসের মৃত্যুর খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েন অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়। তিনি জানান, আমি ভাবতেই পারছি না ও নেই। অকালে চলে গেল। আমাদের পরিবারের মতো ছিল। আমরা একসঙ্গে কম সিনেমা করেছি? তাপস দা বাঙালি দর্শকের কাছে এমন একজন নায়ক যার ফুটপ্রিন্ট ততদিন থাকবে, যতদিন বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থাকবে
১৯৫৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হুগলির চন্দননগরে জন্ম নেন তাপস পাল। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর। কলেজজীবনে মাত্র ২২ বছর বয়সে অভিনয়জগতে পা রাখেন। তাঁর অভিনয়দক্ষতা ছিল ব্যতিক্রমী। তাঁর এই অভিনয়দক্ষতাকেই কাজে লাগান খ্যাতনামা পরিচালকেরা। বাংলা চলচ্চিত্রের তথাকথিত নায়কদের মতো সুদর্শন, ভালো নাচ, মারপিট জানার বিপরীতে সরল চেহারা তাপস পালকে করে তোলে অনন্য। তাঁকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় একের পর এক পারিবারিক গল্পের চলচ্চিত্র।
তরুণ মজুমদার পরিচালিত ‘দাদার কীর্তি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তাপস পাল সিনেমাজগতে পা রাখেন। এরপর ‘গুরুদক্ষিণা’, ‘সাহেব’, ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’সহ বেশ কিছু হিট ছবি তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দেয়। অভিনেতা হিসেবে তিনি বাংলাদেশেও সমান জনপ্রিয় ছিলেন। ‘সাহেব’ ছবির জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান।
জনপ্রিয়তার সূত্রে একসময় রাজনীতিতেও নামেন তাপস পাল। ২০০৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের মনোনয়ন পেয়ে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ হন। অবশ্য নানা মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্কেও জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে রোজভ্যালি–কাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁকে গ্রেপ্তারও করে সিবিআই। শেষ পর্যন্ত অভিনয়ের চেনা জগতে আবার ফিরতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ফেরা হয়নি, চলে গেছেন না–ফেরার দেশে।
ভারতের গণমাধ্যমগুলোর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ৩টা ৩৫ মিনিটে মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তাপস পাল। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্নায়ুর রোগে ভুগছিলেন। কথা বলা ও চলাফেরায় সমস্যা ছিল। ১ ফেব্রুয়ারি বান্দ্রার হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই তিনি ভেন্টিলেশনে ছিলেন। ৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর ভেন্টিলেশন খুলে ফেলা হয়। গতকাল রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।