কম্পিউটারের যুগের বর্তমান সময়ে লেখাপড়া , সব ধরনের পেশায় ও অনেক ধরণের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনে এই গুরুত্বপুর্ণ যন্ত্রটি ছাড়া একেবারেই কল্পনা করাই যায়না। কম্পিউটার বা ল্যাপটপের সামনে কাজ করাটা বিশ্বের সেরা জিনিস বলে মনে করা হলেও বাস্তবে শরীরের জন্য কিন্তু এটা অনেক ক্ষতিকারক। ডেস্কটপের সামনে বসে একটানা অনেকক্ষণ কাজ করলে কাঁধ ও হাতের কবজিতে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়া পেশী ও গাঁটের ব্যথা সহ চোখের ওপর চাপ পড়ে। তৈরি হয় নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতা।
কী কী শারীরিক সমস্যা দেখা যায়
- দীর্ঘ সময় কম্পিউটার টেবিলে বসে থাকা এবং শরীরের দেহভঙ্গি ঠিক না থাকার কারণে মাংসপেশির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে ঘাড়ব্যথা, কোমরব্যথা, ঘাড়ের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া, কাঁধ ও হাত ব্যথা হতে পারে।
- বারবার বা অতিরিক্ত কম্পিউটার অপারেটিংয়ের ফলে কনুই, কবজি, হাত ব্যথাসহ ফুলে যাওয়া, সন্ধি শক্ত হয়ে যাওয়া, মাংসপেশি অবশ ও দুর্বল হতে পারে।
- কম্পিউটারের মনিটর ও চোখের দূরত্বের অসামঞ্জস্যের জন্য মাথাব্যথা, চোখব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, পানি পড়া ইত্যাদি সমস্যাও তৈরি হতে পারে।
চেয়ার ও কম্পিউটার টেবিল কেমন হওয়া উচিত
- যেকোনো অফিস সাজানোর আগে একজন এর্গোনোমিকস এক্সপার্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- বসার চেয়ারের ডিজাইন এমন হবে, যেখানে ঘাড় সোজা ও পিঠ বিশ্রামে থাকবে, কোমরে বা পেছনে সাপোর্ট থাকবে, বসার গদি আরামদায়ক হবে, চেয়ারের উচ্চতা ঠিক রাখার জন্য সুবিধাজনক স্ক্রু থাকবে, হাঁটু থেকে টেবিলের মধ্যে একটি ফাঁক থাকবে এবং পা মাটিতে বা ফ্লোরে লেগে থাকবে। মাউস ও কি-বোর্ড টেবিলের মাঝামাঝি থাকবে, যাতে কনুই ও হাত টেবিলের ওপর সাপোর্টে থাকে।
করণীয়
প্রতি ১ ঘণ্টা কাজের ফাঁকে ৫ মিনিট বিরতি নিন এবং একটু হাঁটাহাঁটি করুন। কিছু স্ট্রেচিং ব্যায়াম করুন। এতে মাংসপেশিতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে এবং মাংসপেশি ক্লান্ত হবে না। যেমন
ক) ডানে, বাঁয়ে, সামনে, পেছনে ঘাড়কে হেলিয়ে টান টান শক্ত করে ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন এবং ছেড়ে দিন। এটি ৫-১০ বার করুন। এতে ঘাড়ব্যথা হবে না।
খ) দুই হাত সোজা করে শক্তভাবে মুঠ করুন। এভাবে ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন ও ছাড়ুন। এটিও ৫-১০ বার করুন। এতে কবজি ও হাতের আঙুল ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন।
গ) সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত কোমরের পেছনে রেখে যতটুকু সম্ভব ধনুকের মতো বেঁকে যান এবং আবার সোজা হোন। এটি ৫-১০ বার করুন। এতে আপনার কোমরে মাংসপেশি স্ট্রেচিং হবে এবং সহজে আপনি কোমরব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন।
বিশ্বের প্রায় সাত কোটি কর্মী কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোমের ঝুঁকিতে রয়েছেন আর সংখ্যাটা দিন দিন বাড়ছেই। দিনে মাত্র তিন ঘণ্টা কম্পিউটার ব্যবহার করলেও এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাঁরা আরও বেশি সময় ধরে কম্পিউটারে কাজ করেন, তাঁদের টানা মাথাব্যথা, ঘাড় ও পিঠে ব্যথাও হয়। তাই একটানা কম্পিউটারের দিকে না তাকিয়ে কাজ করে মাঝে মধ্যে ব্রেক নেওয়া জরুরী। নিয়ম মানুন ও সুস্থ থাকুন।