ডেঙ্গুতে এখন সারাবছরই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে উল্লেখ করে এর কারণ হিসেবে দেশের পরিবেশের পরিবর্তন হওয়াকে মনে করছেন জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. গোলাম ছারোয়ার।
তিনি জানান, উত্তর সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস (বিটিআই) ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছে। এটি একটি লাইভ এজেন্ট। শুনেছি ১০টি কোম্পানিকে এজন্য নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এটি ব্যবহার করা গেলে পরিবেশের জন্য ভালো হবে।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) জাগো নিউজ আয়োজিত ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ: সচেতনতায় করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
গোলাম ছারোয়ার বলেন, যতদিন হলো ডেঙ্গু ভাইরাস বাংলাদেশে এসেছে, তখন থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে বাড়তে ২০২৩ সালে এসে এই মশার কারণে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ নিহত ও আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া ২০২৪ সালের শুরুর মাস থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দেখেছিলাম ২০২৩ সাল থেকেও ডেঙ্গুর আক্রান্ত ও মৃত্যু দ্বিগুণ ছিল। কিন্তু মে-জুনের দিকে একটু স্বস্তিদায়ক ছিল। কিন্তু এরপর থেকে ফের বাড়তে শুরু করেছে। আমরা সঠিকভাবে কাজ না করলে এই অবস্থা আরও ভয়াবহতার দিকেই যাবে।
তিনি বলেন, যদি আমরা মশা নিধন করতে পারি তাহলে ভাইরাসটিকে আমরা নিধন করতে পারবো। আর এই মশা নিধনের জন্য কীটনাশক ব্যবহার করে থাকি। আমরা যে কীটনাশক ব্যবহার করেছি তা হলো অ্যাডাল্টিসাইড ও লার্ভিসাইড। ম্যালাথিয়ন ব্যবহার করা হয় অ্যাডাল্টিসাইডের জন্য আর টেবিফস ব্যবহার করা হয়। মন্ত্রণালয়ে এই মশা নিধনের জন্য তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, তা হচ্ছে স্বল্প মেয়াদি, মধ্যবর্তী ও দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম। স্বল্প মেয়াদির মাঝে রয়েছে যেটি একেবারে আপদকালীন সময়ের মধ্যে কীভাবে আমরা উত্তরণে যাবো।
‘প্রথমত আমি প্রস্তাবনা দিয়েছি যে, এই মশা নিধনের জন্য কীটনাশক প্রয়োগ হচ্ছে তার উপাদান ও কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করতে হবে। এই কীটনাশকের উপাদান পরীক্ষা করে প্ল্যান প্রটেকশন উইংস (পিপিডব্লিউ)। এছাড়া কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করে আইইডিসিয়ার। প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরীক্ষা করে মশার বিরুদ্ধে কার্যকারিতা ও মশার মাঝে প্রতিরোধী কতটুকু হয়েছে তা নির্ণয় করে পরিবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মশককর্মীরা যেভাবে মশার কীটনাশক দেয় তা যথার্থ হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফলে মশা প্রতিরোধী ও চরিত্রের পরিবর্তন ঘটাতে পারছে। তাদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে এবং পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কর্মী এবং সুপারভাইজারকে জানতে হবে কীটনাশক মশার বিরুদ্ধে কীভাবে কাজ করবে। এক্ষেত্রে কীটতত্ত্ববিদকেও মাঠে থেকে কাজ করতে হবে।
রোগীরা কোন এলাকা থেকে আসছে সে এলাকা চিহ্নিত করে কাজ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রামে-গঞ্জে মশা আগে থেকে ছিল কিন্তু মশাগুলো ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল না। আক্রান্ত মানুষের চলাফেরায় মশাগুলোও ভাইরাসে ইনফেকটেড হয়েছে। তাই আমাদের রোগীর আক্রান্তের প্রকৃত ঠিকানা জানতে হবে।