সরকার স্থানীয় নতুন শিল্প পণ্য হিসেবে বেশ কিছু সুবিধা দেয় এই খাতে। ২০০৭ সালে এই শিল্পে বিনিয়োগ শুরু হয়। এসব সুবিধার মধ্যে আমদানি করা কার্ডের বিপরীতে শুল্ক আরোপ করা হয়। এতে দেশীয় কার্ড উৎপাদকরা সুবিধা পায়। এখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমদানি করা কার্ডের বিপরীতে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করার। প্রভাবশালী একটি মহলের কারণে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এনবিআরের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে দেশীয় কার্ড উৎপাদকরা অস্তিত্বসঙ্কটে পড়ে যাবে। সরকারও শতকোটি টাকার রাজস্ব হারাবে। শিল্প খাতের নতুন পণ্য হিসেবে গত কয়েক বছর ধরে দেশে উৎপাদন হচ্ছে ডিজিটাল ব্যাংকিং লেনদেনের কার্ড।
এটিএম কার্ড, পিওএস, স্ক্র্যাচ কার্ডসহ বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল লেনদেনের কার্ডের একটি বড় অংশ বাংলাদেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন করছে। মূলত দেশের ব্যাংকগুলোকে এই কার্ড সাপ্লাই করে প্রতিষ্ঠানগুলো।
দেশে ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন ডিজিটাল লেনদেনে প্রায় দেড় কোটি কার্ড ব্যবহার করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে এসব কার্ডের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ উৎপাদন করছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। বাকি অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। বর্তমানে চিপ বেসড কার্ড উৎপাদন করছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। যা মাস্টারকার্ড, ভিসা কার্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এতে দেশী উৎপাদকরা বিশেষ সুবিধা পায়। ফলে কয়েক বছরের ব্যবধানে পুরো মার্কেটের প্রায় ৪০ শতাংশ দখল করে নেয় দেশী উৎপাদকরা। সম্প্রতি এনবিআর এসব আমদানি করা কার্ডের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল লেনদেনের হ্যাকিং প্রতিরোধে চিপ বেসড কার্ডই জনপ্রিয়। ২০০৭ সালে আমদানি করা কার্ডের ওপর ২ থেকে আড়াই ডলার শুল্ক আরোপ করা হয়।
বাংলাদেশের সব ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কার্ডের চাহিদার পুরোটাই সরবরাহ করতে পারে দেশীয় উদ্যোক্তারা। তবে কিছু ব্যাংকের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকেই আমদানি করতে বেশি আগ্রহী। এর একটি বড় কারণ হলো ওভার ইনভয়েস করে অর্থ পাচার। সম্প্রতি ব্যাংকিং খাতের জন্য আমদানি হওয়া এটিএম, সিডিএম, সিআরএম, আইডিএম, সিএসএম, এসটিএম ও আইডিএমসহ ডিজিটাল ব্যাংকিং প্রযুক্তি পণ্য সরবরাহকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এই খাতের সাথে জড়িতরা বলছেন, ব্যাংকিং প্রযুক্তি পণ্য আমদানির নামে প্রকৃত ক্রয়মূল্য গোপন করে মূল্যের চেয়ে বেশি অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে অবৈধ উপায়ে পরিশোধ করে অর্থপাচার করা হচ্ছে।
এই ক্ষেত্রে হুন্ডির আশ্রয় নিয়ে চীনে পাচার করা হয়েছে বিপুল অর্থ, যা দেশের প্রচলিত মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর বাইরে আমদানি করা কার্ডের শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে দেশীয় উৎপাদকরা অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বেই। পাশাপাশি বেকার হবে কয়েক হাজার লোক। সরকার প্রতি বছর রাজস্ব হারাবে প্রায় শতকোটি টাকা। ঋণপত্র বা এলসিতে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে চীন থেকে আমদানি হওয়া এটিএম ও সিআরএম মেশিনের ক্রয়মূল্য কম দেখানোর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ডিজিটাল ব্যাংকিং প্রযুক্তি আমদানিতে বিপুল অর্থ পাচার নিয়ে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করেছে।