আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ বার্সেলোনা-ভক্তদের অনেক দিনের আশা ছিল, আবারও মেসি-নেইমার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেলবেন। ২০১৭ সালের পর যে দৃশ্য দেখা যায়নি। সে আশা হয়তো পূরণ হতে যাচ্ছে অবশেষে। কিন্তু তাই বলে এভাবে পূরণ হবে?
বার্সেলোনা ছাড়ছেন মেসি। কাতালান ক্লাবটিই আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে খবরটা। এর পর থেকেই উত্তপ্ত ফুটবল দুনিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো ঘোষণা না আসলেও ফুটবলের ব্যাপারে যিনি একটুও খোঁজখবর রাখেন, তিনিও জানেন, মেসিকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে পিএসজি। আর পিএসজিতে মেসি গেলেই, নেইমারের সঙ্গে আবারও আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির জাদু দেখতে পারবেন ফুটবলপ্রেমীরা। মেসি-নেইমার একসঙ্গে মাঠ মাতাচ্ছেন, কিন্তু বার্সার জার্সি গায়ে নেই- এটা হয়তো দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি বার্সা সমর্থকেরা।
তবে পিএসজিও কাজ শুরু করে দিয়েছে। মেসিকে দলে টানার ব্যাপারে ক্লাবটির আগ্রহ আজকের নয়। জুনের ৩০ তারিখে মেসির চুক্তি যখন শেষ হয়ে যায়, তখনই মেসির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছিল পিএসজি, তাঁকে দলে টানার ব্যাপারে। মেসি অবশ্য তখন বিদায়ই করে দিয়েছিলেন পিএসজিকে। মেসির মনে আশা ছিল, প্রাণের ক্লাব বার্সেলোনার সঙ্গেই আবার চুক্তি হবে তাঁর। সেটি শেষ পর্যন্ত হয়নি।
কিন্তু পিএসজি-ই যে মেসিকে দলে আনতে পারবে, সেটাও শতভাগ নিশ্চিত নয়। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা, ফরাসি সংবাদমাধ্যম লা পারিসিয়েন, ইংলিশ সংবাদমাধ্যম ইএসপিএন সবাই বলছে, শেষমেশ অর্থকড়ির কারণে পিএসজিও পিছু হটতে পারে মেসিকে নেওয়ার ব্যাপারে। করোনার কারণে তাদেরও আর্থিক ক্ষতি কম নয়। এর ওপর এর মধ্যেই দলে আশরাফ হাকিমি, জর্জিনিও ভাইনালডম, সের্হিও রামোস, জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মার মতো একাধিক খেলোয়াড়কে দলে এনেছে তাঁরা। এত খরচের পর মেসিকে বাড়তি বেতন দিয়ে দলে আনাটা একটু কষ্টসাধ্যই। তাঁর ওপর এমবাপ্পের চুক্তি নবায়ন নিয়েও বেশ ঝামেলায় আছে ক্লাবটা।
২০২২ সালের জুনে চুক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে এমবাপ্পের। এমনিতেই গত কয়েক মাস ধরে যাই-যাই করছেন ফরাসি তারকা। আকর্ষণীয় চুক্তি দিয়ে এর মধ্যেই এমবাপ্পেকে ‘বেঁধে’ রাখতে না পারলে আগামী দিনের সেরা তারকাটিও হাতছাড়া হয়ে যাবে পিএসজির। বর্তমানের আশায় পিএসজি কী করে ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিতে পারে? ফ্রান্সের আয়কর আইনও মেসিকে দলে আনার ব্যাপারে খুব একটা সাহায্য করবে না পিএসজিকে। মেসিকে তাঁর প্রত্যাশামাফিক করহীন তিন কোটি ইউরো বেতন দিতে হলে পিএসজিকে প্রতি মৌসুমে কর বাবদ আরও ৪ কোটি ইউরো খরচ করতে হবে। সব মিলিয়ে সাত কোটি ইউরোর বেরিয়ে যাবে তাদের তখন। এমবাপ্পের নতুন চুক্তিই যেখানে অনিশ্চিত, সেখানে মেসির পেছনে এত খরচ কীভাবে করবে পিএসজি? মেসির সঙ্গে চুক্তিটা এমবাপ্পেকে দলে ধরে রাখার ব্যাপারেও বড় ঝুঁকি। মেসির চুক্তি দেখে এমবাপ্পে যদি আরও বড় কিছুর দাবিতে বেঁকে বসেন?
ওদিকে সদ্যই অ্যাস্টন ভিলা থেকে দশ কোটি পাউন্ডের বিনিময়ে ইংলিশ মিডফিল্ডার জ্যাক গ্রিলিশকে দলে টেনেছে ম্যানচেস্টার সিটি, দিয়েছে দশ নম্বর জার্সি। মজার ব্যাপার আয়োজন করে গ্রিলিশের হাতে দশ নম্বর জার্সি তুলে দেওয়ার দিনই মেসির বার্সা ছাড়ার পাকা খবরটি প্রকাশিত হলো। গ্রিলিশ ছাড়াও সিটির নজরে আছেন টটেনহামের স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন, যার পেছনে একই পরিমাণ অর্থ খরচ করতে রাজি সিটি। কিন্তু মেসির বার্সা ছাড়ার ঘোষণা ওই পরিকল্পনাকে পালটে দিতে পারে। হ্যারি কেইনকে দলে টানতে গেলে অন্ততপক্ষে ১০ কোটি পাউন্ড খরচ করতেই হবে, লাগতে পারে আরও বেশি। সঙ্গে টুকটাক বোনাসের ঝামেলা তো আছেই। ট্রান্সফার ফি নিয়ে টটেনহামের সভাপতি ড্যানিয়েল লেভির সঙ্গে যন্ত্রণাদায়ক দর কষাকষিতে না গিয়ে সিটি হয়তো এখন মেসির দিকেই ঝুঁকবে, আর্জেন্টাইন তারকাকে পেতে তো আর কোনো বাড়তি দলবদল ফি দিতে হবে না সিটিকে!
মেসির পরবর্তী ক্লাবের তালিকায় চেলসি, ইন্টার মিলান, ইন্টার মায়ামি, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, জুভেন্টাসের মতো ক্লাবের নাম আসলেও ঘুরেফিরে সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে আসছে এ দুই ক্লাবেরই নাম। দেখা যাক, মেসি অবশেষে কোথায় যান।