ধুলাবালি থেকে চোখকে সুরক্ষিত রাখতে চশমা ব্যহার করেন কেউ কেউ। কেউ আবার চোখের দৃস্তিশক্তি ঠিক রাখতে সঙ্গী করেছেন এই জিনিসটি। তবে আধুনিক ফ্যাশানে চশমা বেশ খানিকটা জায়গাজুড়ে থাকলেও এর ব্যবহার কিন্তু বহু আগে।
৪০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আর্কটিক সার্কেলের তুষারপাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে চশমা ব্যবহার করছেন এ অঞ্চলের মানুষ। চশমা দিয়ে তাদের চোখকে অন্ধত্ব থেকে রক্ষা করে আসছে তারা। সাধারণত তিমি মাছের হার, শিং এবং হাতির দাঁত খোদাই করে বানানো হতো এই চশমাগুলো। ওয়ালরাস টাস্ক হাতির দাঁতও ব্যবহার করা হয় এর জন্য। এটি মোর্স নামেও পরিচিত।
চশমাটি তৈরি হয় পরিধানকারীর মুখের আদলের উপর ভিত্তি করে। সামনে দিয়ে এক বা একাধিক সরু অনুভূমিক স্লিট খোদাই করা হয়। চশমাটি মুখের উপর শক্তভাবে ফিট করে যাতে স্লিটের মধ্য দিয়ে একমাত্র আলো প্রবেশ করে এবং কখনো কখনো ভেতরে কাঁচও লাগানো হয়। যা কেবল আলোর পরিমাণ কমাতে নয় বরং চোখের তীক্ষ্ণতা উন্নত করতে সাহায্য করে। স্লিটের প্রস্থ যত বেশি হবে দৃশ্যের ক্ষেত্রও তত বড় হবে।
মূলত এস্কিমো শিকারিরা এইসব হাতের খোদাই করা তুষার চশমা ব্যবহার করত। যখন তারা খাবার আনতে বেরিয়ে আসত। তারা তুষার চশমা ব্যবহার করত কারণ তারা তুষার-অন্ধ হওয়ার ঝুঁকি নিতে পারত না। ইউপিক, ইনুইট, আলেউত এবং আলাস্কান আদিবাসীরা এই তুষার চশমা ব্যবহার করতেন।
ইনুইট ভাষার বিভিন্ন উপভাষায়, তুষার চশমাগুলোকে ইনুখুক, ইনুকসুক, ইলগাক এবং ইগগাক বলা হয়। শেষ দুটি শব্দ সানগ্লাসের জন্যও ব্যবহৃত হয়। সেন্ট্রাল ইউপিক ভাষায় স্নো গগলস নিগৌগেক এবং সাইবেরিয়ান ইউপিক ভাষায়, স্নো গগলস শব্দটি আইয়েগাটেক।
এই আদিম তুষার চশমা বা সানগ্লাসগুলো প্রাগৈতিহাসিক সময়ে ফ্যাশনেবল হয়ে ওঠে। আধুনিক সময়ের সূর্যের আলোক রশ্মি থেকে বাঁচতে এই সানগ্লাস খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এমনকি ফ্যাশনের তালিকায় বেশ পাকাপোক্ত স্থান দখল করে আছে সানগ্লাস। বিশ্বের প্রথম সানগ্লাসের জন্য এস্কিমো বা ইনুইটদেরই কৃতিত্ব দেন ইতিহাসবিদরা। প্রথম তুষার গগলস পুরানো বেরিং সাগর নামে একটি সংস্কৃতির অংশ। এই সংস্কৃতির লোকেরা আলাস্কার পশ্চিম উপকূলে কোথাও বাস করত। তারা ছিলেন আজকের ইনুইট মানুষের পূর্বপুরুষ।
প্রায় ৮০০ বছর আগে, থুল সংস্কৃতির ইনুইট লোকেরা তুষার চশমাগুলো কানাডায় নিয়ে এসেছিল। থুলি যুগের তুষার চশমার একটি ধ্বংসাবশেষ এখন কানাডিয়ান সভ্যতার সংগ্রহশালায় স্থান পেয়েছে। এটি ওয়ালরাস হাতির দাঁত থেকে তৈরি করা হয়েছিল। কুইবেকে অবস্থিত জাদুঘর অনুসারে এটি ১২০০ খ্রিস্টাব্দের। এছাড়াও কোপেনহেগেনের জাতীয় জাদুঘরসহ বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে তুষার অঞ্চলের এই চশমা।