জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে কিশোর কুমারের ‘একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে’ গানটি পরিবেশন করে রাতারাতি লাইমলাইটে চলে আসেন । তোমার হাত পাখার বাতাসে গান গেয়ে রিকশাচালক থেকে রাতারাতি গায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন আকবর। দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে তার গানের খ্যাতি। তবে দুঃসংবাদ হচ্ছে, এ শিল্পী বর্তমানে মোটেও ভালো নেই। অসুস্থ থাকার পরেও তার ওষুধ কেনার টাকা নেই, ঘরে খাবার নেই। স্ত্রী ও একমাত্র কন্যা সন্তান নিয়ে মাঝেমধ্যে উপোসও থাকতে হচ্ছে এ শিল্পীকে।
আজ শনিবার একটি গণমাধ্যমকে নিজের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন আকবর। তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে সর্বশেষ একটা কাজ করেছিলাম। প্রায় দুমাস হলো ঘরে বসে আছি। মিরপুর-১৩ এলাকায় থাকি। চারদিক লকডাউন। ঘর ভাড়া দিতে পারিনি। বাড়িওয়ালা ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। বাসার পাশে দোকানে বাকি করে খেতে খেতে অনেক ঋণ হয়ে গেছে। দুদিন আগে দোকানদার বাকিতে জিনিস দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এখন ঘরে খাবার নেই। এজন্য উপোস থাকতে হচ্ছে। জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছি।’
গত বছরের জানুয়ারিতে কিডনি সমস্যা, রক্ত শূন্যতা, টিবি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন আকবর। তার শরীরে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়ামের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। সেজন্য কোমর থেকে দুই পা অবশ ছিল। রোগ ও আর্থিক সংকটে তখন মুমূর্ষু ছিলেন এই শিল্পী। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আকবরকে ডেকে তার চিকিৎসার জন্য ২০ লাখ টাকা (সঞ্চয়পত্র) অনুদান দিয়েছিলেন।
তারপরও এই দৈন্যদশা কেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে আকবর বলেন, ‘২০ লাখের সঞ্চয়পত্র ছাড়া নগদ ২ লাখ টাকার চেক পেয়ে ঢাকার পিজি হাসপাতাল ও ইন্ডিয়া থেকে উন্নত চিকিৎসা নিয়েছিলাম। এ ছাড়া প্রতি ৩ মাস পর পর সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র থেকে ৪৯ হাজার টাকা করে পাই চিকিৎসা বাবদ। সর্বশেষ জানুয়ারিতে টাকা তুলেছিলাম। আগামী মাসে টাকা তুলে এরমধ্যে যা ঋণ হয়েছে তা শোধ করতে হবে। ওদিকে শরীর আবার খারাপ হতে শুরু করেছে। ভাতই খেতে পারছি না এরমধ্যে আবার ওষুধ কই পাবো?’
এক সময়ের জনপ্রিয় এই শিল্পী বলেন, ‘দুইমাস ওষুধ খেতে না পেরে চিন্তায় অনাহারে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ছি। সারা শরীরে ফোসকা আর ঘা দেখা দিয়েছে। আমার আত্মীয়-স্বজন নেই। শ্বশুরবাড়ি থেকেও আমাকে মেনে নেয়নি। তাই তাদের কোনো হেল্প কখনো পাইনি। বন্ধু-বান্ধব আমার নেই বললেই চলে। করোনার সময় সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুবই সমস্যার মধ্যে আছি। কার কাছে হেল্প চাইবো? লজ্জা লাগে। এখন আমার বাসায় খুব করুণ অবস্থা। আমি এখন খুব কষ্টে আছি, এটা বলে বোঝাতে পারবো না।’
আকবর আরও বলেন, ‘বিভিন্নভাবে শুনছি মিডিয়ার অস্বচ্ছল মানুষ ও শিল্পীকে সাহায্য সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ ছাড়া রাস্তায় অনেক সময় এসে সাহায্য দিচ্ছে। কিন্তু পকেটে যাতায়াতের টাকা নেই। ফোন করে কারও কাছে সাহায্যের কথাও বলতে পারছি না। কারণ এই সময়ে কেউ ভালো নেই। ফোন করলে বিরক্তবোধ করবে। জানি না ভবিষ্যতে কি অপেক্ষা করছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো অনাহারে মারা যেতে হবে।’