আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ তিন ম্যাচ সিরিজে শেষ ওয়ানডেতে জিতে লঙ্কানদের হোয়াইটওয়াশ করতে এখন বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য ২৮৭ রানের। কিন্তু মিরপুরের মাঠে স্বাগতিক বাংলাদেশ ২৫০ রানের বেশি তাড়া করে জিতেছে মাত্র দুইবার। যার সবশেষটি ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে। অর্থাৎ আজ জিততে হলে ব্যাটসম্যানদের অনেক দিন পর কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হবে।
এই ম্যাচে সিরিজে প্রথমবারের মতো টস হেরেছে বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর মিশনে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক কুশল পেরেরা। প্রথম দুই ম্যাচে টস হেরে পরে ব্যাটিং করতে হয়েছিল সফরকারিদের। আজ টস ভাগ্য বদলে ব্যাটিংয়ের শুরুটাও দুর্দান্ত করে তারা। প্রথম দুই ম্যাচে তিনটি ক্যাচ ছেড়েছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু বোলারদের উজ্জ্বল পারফরম্যান্সে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল ফিল্ডিং ব্যর্থতা।
আজ (শুক্রবার) শেষ ম্যাচে এক ব্যাটসম্যানেরই তিন ক্যাচ ছাড়ল টাইগাররা। যার সুবাদে সেঞ্চুরি তুলে নিলেন কুশল পেরেরা। অধিনায়কের সেঞ্চুরিতে ভর করে ৬ উইকেটে ২৮৬ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
তবে তাদেরকে বেশিদূর যেতে দেননি তাসকিন আহমেদ, দিয়েছেন প্রথম ব্রেক থ্রু। একই ওভারে এনে দিয়েছেন দ্বিতীয় উইকেটও। প্রথম দুই ম্যাচে উইকেটের দেখা না পাওয়া তাসকিন, আজ নিজের দ্বিতীয় ওভারেই তুলে নিলেন দুইটি উইকেট।
তাসকিনের এক ওভারে জোড়া উইকেট হারানোর পর শ্রীলঙ্কার ইনিংসের হাল ধরেন কুশল পেরেরা ও কুশল মেন্ডিস। তাদের তৃতীয় উইকেট জুটিতে ২৫ ওভারের মধ্যেই দেড়শ রান করে ফেলে তারা। পেরেরা-মেন্ডিসের জুটিতে ৬৮ রান হওয়ার পর ইনিংসের ২৬তম ওভারে তৃতীয়বারের মতো আঘাত হানেন তাসকিন।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শরিফুল ইসলামের করা ইনিংসের প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকান গুনাথিলাকা। প্রথম ওভারে আরও একটি চারের মারে আসে ৯ রান। একপ্রান্ত থেকে রান থামিয়ে রাখার কাজটি ভালোভাবেই করেন মিরাজ। কিন্তু অন্যপ্রান্তে দেদারসে রান বিলিয়েছেন শরিফুল, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও তাসকিন আহমেদরা। এ কারণেই মূলত প্রথম দশ ওভারের মধ্যে এক পাশে মিরাজকে রেখে, অন্যপাশে তিন বোলারকে ব্যবহার করতে হয়েছে তামিমকে।
ইনিংসের এগার নম্বর ওভারে আনা হয় মোস্তাফিজুর রহমানকে। প্রথম দুই ম্যাচে যথাক্রমে ২৪ ও ৩০ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিল লঙ্কানরা। এবার শেষ ম্যাচে গিয়ে তাদের উদ্বোধনী জুটি যোগ করে ফেলল ৮২ রান। ইনিংসের দ্বাদশ ওভারে নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে গুনাথিলাকাকে বোল্ড করেন তাসকিন। আক্রমণাত্মক শট খেলতে গিয়ে ইনসাইড এজে বোল্ড হন ৩৩ বলে ৩৯ রান করা গুনাথিলাকা।
একই ওভারের শেষ বলে কট বিহাইন্ড হয়েছেন লঙ্কান প্রতিভাবান তরুণ নিসাঙ্কা। চার বল খেলেও রান করতে পারেননি তিনি। অধিনায়ক পেরেরাকে সঙ্গ দিতে চার নম্বরে নামেন সহ-অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস। দুজনের জুটিতে তাসকিনের সেই ওভারের ধাক্কা বেশ ভালোভাবেই সামাল দেয় লঙ্কানরা।
জুটি ভাঙতে পারত ইনিংসের ২৩তম ওভারে। সাকিব আল হাসানের নিজের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে রিভার্স সুইপ করেছিলেন পেরেরা। শর্ট থার্ডম্যানে সেটি তালুবন্দি করতে পারেননি মোস্তাফিজুর রহমান। ফলে ব্যক্তিগত ৬৮ রানে জীবন পেয়ে যান লঙ্কান অধিনায়ক।
এর আগে ইনিংসের ১৬তম ওভারের প্রথম বলে ক্যারিয়ারের ১৫তম ফিফটি পূরণ করেন কুশল পেরেরা। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে মাত্র ৪৪ বলে ৮ চারের মারে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। তার ব্যাটে ভর করে ১৬ ওভারের মধ্যেই দলীয় শতক ছিয়ে ফেলে লঙ্কানরা।
শুরুতে খানিক খোলসবন্দী থাকলেও ক্রমেই হাত খুলে খেলতে থাকেন কুশল মেন্ডিসও। মোসাদ্দেকের করা ২৪তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকান মেন্ডিস। তার দেখাদেখি দুই বল পর নিজের প্রথম ছক্কা মারেন কুশল পেরেরাও। সে ওভারেই পেরেরা-মেন্ডিস জুটির পঞ্চাশ হয়ে যায়।
সাকিবের করা ২৫তম ওভারেও আউট হতে পারতেন লঙ্কান অধিনায়ক। বড় শটের আশায় স্লগ করেছিলেন পেরেরা, বল উঠে যায় আকাশে। শর্ট মিড উইকেট থেকে মিড অনের দিকে দৌড়ে বলের নিচে গেলেও, সেটি তালুবন্দী করতে পারেননি আফিফ হোসেন ধ্রুব। ফলে ৭৯ রানে দ্বিতীয় জীবন পান পেরেরা।
তবে অধিনায়কের মতো ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না মেন্ডিসের। তাসকিনের করা ২৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে স্লগ করতে গিয়ে শর্ট মিড অফে দাঁড়ানো তামিম ইকবালের হাতে ক্যাচ দেন লঙ্কান সহ-অধিনায়ক। আউট হওয়ার আগে ৩৬ বলে ২২ রান করেন তিনি। এরপর আবার জীবন পান কুশল পেরেরা।
ইনিংসের ৩২তম ওভারের পঞ্চম বলে ৯৯ রানে খেলছিলেন লঙ্কান অধিনায়ক। মোস্তাফিজের স্লোয়ারে অনসাইডে খেলতে গিয়ে লিডিং এজ হয় পেরেরার, বল চলে যায় মিড অফে দাঁড়ানো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে। কিন্তু সেটি হাতে রাখতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। ফলে তৃতীয়বারের মতো বেঁচে যান পেরেরা। পরের বলেই ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি।
সেঞ্চুরির পর অবশ্য হাত খুলতে পারেননি পেরেরা। শেষ পর্যন্ত তাকে সাজঘরে ফেরান বাঁহাতি পেসার শরিফুল। ইনিংসের ৪০তম ওভারে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ১২২ বলে ১২০ রান করেন লঙ্কান অধিনায়ক। এরপর প্রত্যাশামাফিক খেলতে পারেননি নিরোশান ডিকভেলা, রানআউট হন ৯ বলে ৭ রান করে।
বেশি কিছু করতে পারেননি প্রথম ম্যাচে ঝড় তোলা ভানিন্দু হাসারাঙ্গাও। তাসকিনের চতুর্থ শিকারে পরিণত হওয়ার আগে খেলেন ২১ বলে ১৮ রানের ইনিংস। শেষ দিকে ফিফটি হাঁকিয়ে দলকে বড় সংগ্রহে পৌঁছে দেন ধনঞ্জয় ডি সিলভা। তিনি অপরাজিত থাকেন ৭০ বলে ৫৫ রান করে।
বাংলাদেশের পক্ষে ডানহাতি পেসার তাসকিন একাই নিয়েছেন ৪ উইকেট। অন্য উইকেট গেছে বাঁহাতি পেসার শরিফুল হকের ঝুলিতে।