কুলির কাজ করে ৩০০ কোটি টাকার কোম্পানির মালিক!

স্কুল থেকে ফেরার পথে বাবার সঙ্গে কফির বাগানে কুলির কাজ করতেন মুস্তাফা। সেই ছোট্ট দরিদ্র বালকটি এখন ৩০০ কোটির একটি কোম্পানির মালিক। তার প্রতিষ্ঠান ‘আইডি ফ্রেশ ফুড’ বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কয়েক হাজার মানুষের খাদ্যের জোগান দেয়। স্থান পেয়েছেন ফোর্বসসহ বিশ্ব বিখ্যাত ম্যাগাজিনগুলোতে। তাকে নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দেশটির শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।

২০০৫ সালে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের ব্যাঙ্গালুরে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। চার কাজিন আব্দুল নাজের, শামসুদ্দিন টিকে, জাফর টিকে ও নওশাদ টিএর সঙ্গে মিলে তিনি এই কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা পিসি মুস্তাফার এবং বাকিগুলো কাজিনদের।

তারা ইডলি/ডোসা বাটার, পরোটা, চাপাতিস, দই এবং পনিরসহ সকালের নাস্তার জন্য একাধিক তাজা খাবার প্রস্তুত করে। পরে সেগুলো প্যাকেজিং করে অর্ডার অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে পাঠায়। মোটকথা, কোম্পানিটির খাবার খেয়ে বর্তমানে অসংখ্য মানুষ তাদের দিন শুরু করেন। তবে এই অবস্থানে আসার পথ অতটা সহজ ছিল না।

স্কুল থেকে ফেরার পথে বাবার সঙ্গে কফির বাগানে চলে যেতেন মুস্তাফা। সেখানে পিঠ থেকে স্কুলব্যাগ নামিয়ে তুলে নিতেন ভারী কাঠের বাক্স এবং কুলির কাজ শুরু করতেন। ফলে সন্ধ্যায় আর পড়ায় বসার সুযোগ হতো না। রাজ্যের ঘুম চোখে ভীর করতো। ফলশ্রুতিতে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ফেল করে বসেন।

তখন তাদের পরিবারের অবস্থা এমন ছিল যে ঠিকমতো তিনবেলা খাবার জুটতো না। অসংখ্য রাত অভুক্ত থেকে কাঁটিয়েছেন। মা, বাবা দু’জনই ছিলেন নিরক্ষর। ফলে বিকল্প কোনো উপায়ও ছিল না। আর তিনিই এখন কয়েক হাজার মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করছেন। বছরে আয় করছেন প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।

মুস্তাফা জানান, সন্তান পড়াশোনা ছেড়ে কুলির কাজ করুক, এটা কোনো পিতা-মাতা চান না। কিন্তু আমার পরিবারে টিকে থাকার জন্য এটা ভিন্ন বিকল্প উপায় ছিল না।

মূলত ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ফেল করার পরই নিজের মধ্যে পরিবর্তনের তীব্র ইচ্ছা জাগে। সেই প্রেক্ষিতে শুরু করেন কঠোর পড়াশোনা। যার ফসল আসে দশম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করার মাধ্যমে। এভাবে কঠোর পরিশ্রমের ফলস্বরুপ দ্বাদশেও ভালো রেজাল্ট করে এনআইটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পান মুস্তাফা।

পরবর্তীতে বিপুল বেতন সহকারে বহুজাতিক সংস্থায় বড় চাকরি পান। চাইলেই স্বচ্ছন্দ ও নিশ্চিন্ত জীবন কাটাতে পারতেন। কিন্তু ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক সংস্থায় কাজ করার পরও ঠিক যেন তৃপ্তি পাচ্ছিলেন না। পরে দেশের জন্য কিছু করার আকাঙ্খা থেকে ফিরে আসেন দেশে।

২০০৫ সালে সাড়ে পাঁচশো বর্গফুট জায়গা নিয়ে অফিস শুরু করেন মুস্তাফা। শুরুর দিকে পাঁচ হাজার কেজি চাল থেকে ১৫ হাজার কেজি ইডলির উপকরণ তৈরি করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। আর এখন ভারতের বড় শহরগুলোতে নিয়মিত চার গুণ বেশি উপকরণ সরবরাহ করে তারা।

প্রথম বছর থেকেই লাভের মুখ দেখে প্রতিষ্ঠানটি এবং মাত্র ১০ বছরের মধ্যে বছরে ১০০ কোটির আয় করতে শুরু করে তারা। যা পরের বছরই ১৮২ কোটিতে দাঁড়ায়। বিগত বছরে ‘আইডি ফ্রেশ ফুড’ এর আয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৯৪ কোটি টাকা। আগের বছর এই সংখ্যাটা ছিল ২৩৮ কোটি।

Leave a Reply

Translate »