করোনা ভাইরাসের কারনে দেশে আতংকিত মানুষ। সবাই যার যার জায়গায় থেকে চেষ্টা করছেন সচেতনতা তৈরি করার।
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগে গান-কথায় সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে গান বাংলা টেলিভিশনের নিয়মিত আয়োজন ‘মিউজিক ফর পিস-এফবি লাইভ’। ২৬ মার্চ থেকে প্রতিদিন রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত লাইভ অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করছেন দেশ-বিদেশের জনপ্রিয় তারকারা।
সংগীত পরিচালক কৌশিক হোসেন তাপসের সঞ্চালনায় গান কথার এ আয়োজনে উপস্থিত হয়ে প্রত্যেক শিল্পীই এই দুর্যোগে মানুষকে নিজের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মনের সুস্থতার প্রতিও যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান। পরিবেশন করেন গান।
৭ এপ্রিল এ আয়োজনে উপস্থিত হন জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও সংগীতশিল্পী মেহের আফরোজ শাওন, অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন সংগীতশিল্পী পারভেজ সাজ্জাদ, পূজা, নাদিয়া ডোরা, প্রত্যয় খান, নদী, নিলয়, তারেক তূর্য এবং তানজীব সরোয়ার।
গানের শিল্পীদের মাঝে মধ্যমণি হয়ে ওঠা দুই তারকা শাওন ও বাঁধনের কথায় মিললো একই সুর। দু’জনই সন্তানদের সঙ্গে ঘরে বসেই সময় কাটাচ্ছেন।
পরিবারকে সময় দেয়ার পাশাপাশি শাওন চর্চা করছেন নজরুল সংগীত। দুই সন্তান নিষাদ ও নিনিতের কাছ থেকে পিয়ানো বাজানোও শেখার পরিকল্পনা করছেন। অন্যদিকে তাদেরও নানা ধরণের সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত থাকতে উৎসাহিত করছেন।
শাওনের মতে, গান শোনা, বই পড়াসহ মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে এই সময়টাকে যতভাবে কাজে লাগানো যায় সকলের তাই করা উচিত। অন্যদিকে বাঁধনের সময় কাটছে পরিবার ও কন্যা সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালন করা নিয়ে।
দুর্যোগে সকলের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ব্যক্তিজীবনে দন্ত চিকিৎসক এ তারকা পরামর্শ দিলেন পরিমিত ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মানবদেহের প্রয়োজনীয় ইমিউন সিস্টেম ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমানোর।
শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাঁধন আরও বলেন, এই সময়টায় শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি আমাদের বিশেষ যত্নবান হতে হবে। তারা ভয় পেতে পারে। তারা খবর দেখছে, বড়দের কাছ থেকে শুনছে। করোনাভাইরাসটি সম্পর্কে তাদেরও শোনান। তাদেরও পরিস্থিতিটা বুঝিয়ে বলুন, সচেতন করে তুলুন।
বাঁধনের সাথে একমত হয়ে শাওন বলেন, “নিজেকে সময় দেয়ার পাশাপাশি আমি আমার দুই সন্তানকে সময় দিচ্ছি। বড় ছেলে নিষাদের হাতে তার বাবার (হুমায়ূন আহমদের) বইগুলো তুলে দিচ্ছি। ছোট ছেলেকে বাংলা শেখাচ্ছি। আমার মনে হয় এখনই সময় শিশুদের আরও বেশি মানবিক করে তোলার। আমি তাদের খাবার অপচয় না করতে পরামর্শ দিচ্ছি। এখন তারা বাড়তি খাবার নেয় না। প্রতিদিনই কিছু খাবার ছাদে গিয়ে কাককে খাওয়ায়। কিংবা বাড়তি খাবারগুলো দারওয়ানের মাধ্যমে বাইরের ভ্রাম্যমাণ অসহায় প্রাণীদের জন্য পৌঁছে দেয়।
অনুষ্ঠানে হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ‘শ্রাবণ মেঘ দিন’ চলচ্চিত্রের গান ‘সোয়াচান পাখি’ গানটি পরিবেশন করেন শাওন। প্রশ্ন আসে, বেঁচে থাকলে এই দুর্যোগে কি করতেন হুমায়ূন আহমেদ? উত্তরে জনপ্রিয় এ কথা সাহিত্যিক ও নির্মাতার জীবনসঙ্গী শাওন বলেন, এটা ঠিক হুমায়ূন থাকলে অনেক কথা সহজভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারতেন। যেটা আমরা বলবার চেষ্টা করছি, সরকার প্রধান থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পর্যন্ত যে কথাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছাতে চেষ্টা করছেন সেগুলো খুব সাধারণভাবে পৌঁছে দিতে পারতেন।
প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তারে হুমায়ূন আহমেদ রচিত কুদ্দুস বয়াতির কণ্ঠে জনপ্রিয়তা পাওয়া ‘এই দিন দিন নয়’ গানটির কথা স্মরণ করেন শাওন আরও বলেন, “সাধারণ কিছু অভ্যাস বদলালে বা রপ্ত করতে পারলেই যে আমরা করোনার মতো এরকম একটা মহামারি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারি এটা হয়তো উনি ছড়িয়ে দিতে পারতেন তার কলামে, গানে বা নির্মাণে। সে দায়িত্বটা এখন তার ভক্তদের। হুমায়ূনের মতো করে না হোক তারা তাদের ভালোবাসার শক্তিটাই যেন কাজে লাগান। ”
জাতিসংঘের সহায়ক সংস্থা ইউএনডিপি ও দেশের বৃহত্তর মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানি রবি নেটওয়ার্কের সহযোগিতায় আয়োজিত অনুষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠান দু’টিসহ গান বাংলা টেলিভিশনের ফেসবুক পেজে প্রতিদিন উপভোগ করছেন প্রায় পৌনে দুই কোটি দর্শক। অনুষ্ঠানটিতে ইতিমধ্যেই অংশ নিয়েছেন প্রায় শতাধিক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক তারকা শিল্পী। পুরো আয়োজনটির সম্প্রচার সমন্বয় করছেন সংগীতশিল্পী জুয়েল মোর্শেদ।