কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ায় আফরোজা আক্তার (২২) নামে এক গৃহবধূকে তালাক দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সালিস হলেও স্ত্রীকে মেনে নিতে রাজি হননি স্বামী রুহুল আমিন। ফলে ৮ মাসের কন্যা শিশুকে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ওই গৃহবধূ।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, গত বছরের ৩ জানুয়ারি আফরোজা ও রুহুল আমিনের বিয়ে হয়। বিয়েতে যৌতুক হিসেবে রুহুলকে একটি মোটরসাইকেলসহ প্রায় দুই লাখ টাকার আসবাবপত্র দেওয়া হয়। বিয়ের কিছুদিন পরই অন্তঃসত্ত্বা হন আফরোজা। মেডিকেল টেস্টে তিনি জানতে পারেন- গর্ভে কন্যা সন্তান রয়েছে। এ খবর শোনার পরই ক্ষিপ্ত হয়ে যান রুহুল আমিন। পরে কন্যা শিশুটি জন্ম নেওয়ার এক মাসের মাথায় স্ত্রীকে মৌখিকভাবে তালাক দেন তিনি।
আফরোজা বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, শিশু নুসরাতের মুখ দেখে বাবার মন পাল্টে যাবে। কিন্তু তা আর হয়নি। মেয়ের জন্মের একমাস পর স্বামী মোবাইলে আমার সঙ্গে আর ঘর করবে না বলে জানায়। এ সময় মৌখিকভাবে তালাক দেয় সে।’
এ বিষয়ে আফরোজার ভাই আব্দুল হালিম জানান, ‘বিয়েতে রুহুলকে একটি মোটরসাইকেলসহ প্রায় দুই লাখ টাকার আসবাবপত্র দেওয়া হয়। মেয়ে সন্তান জন্ম নেওয়ায় রুহুলের মন খারাপ হলে আমরা প্রস্তাব দেই প্রয়োজনে আরও দুই লাখ টাকা দেব। কিন্তু এরপরও আমার বোনের সংসার টিকিয়ে রাখতে পারিনি।’
এদিকে আফরোজার মেয়ে নুসরাতের বয়স এখন আট মাস। শিশুটির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নেন এলাকাবাসী। গত ২৮ আগস্ট স্থানীয় জয়কা ইউনিয়ন পরিষদে সালিসের আয়োজন করা হয়। এতে জয়কা ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন, পাশের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল শাকির নূরু শিকদারসহ অন্তত তিন ইউনিয়নের গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। ওই সালিসেও বিষয়টি নিয় কোনো সমাধান হয়নি।
সালিসে উপস্থিত স্থানীয় শিক্ষক এমদাদুল হক বলেন, ‘রুহুল আমিন ছেলে সন্তান চেয়েছিলেন। কিন্তু ঘরে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। এতে ক্ষিপ্ত হন রুহুল। পরে স্ত্রীকে তালাক দেন বলে সালিসে প্রমাণ হয়। সালিসে উপস্থিত প্রায় সবাই রুহুলকে বুঝিয়ে ব্যর্থ হয়। পরে অনেকটা বাধ্য হয়ে লিখিত তালাকের ব্যবস্থা করা হয়।’
এ বিষয়ে রুহুল আমিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘মোটর সাইকেলসহ ২ লাখ টাকার আসবাবপত্র নিয়েছি ঠিক আছে। তবে মেয়ে সন্তান হওয়ার কারণে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছি এ কথা ঠিক নয়। সে (আফরোজা) আমার কথা শুনতো না। মেয়ে হওয়ার পর সে আমার সঙ্গে আরও খারাপ আচরণ শুরু করে। আরও নানাবিধ কারণে তাকে তালাক দিয়েছি।’