আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ সাধারণ মানুষ থেকে শীর্ষ ধনী। এই মুহূর্তে যাঁদের হাতে টাকা আছে, তাঁদের একটাই প্রশ্ন-টাকা রাখব কোথায়। এ প্রশ্নের উত্তরে সবার আগে এত দিন যে উত্তরটা মিলত, সেটা হলো ‘সঞ্চয়পত্র’। কারণ, নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সবচেয়ে বেশি মুনাফা মিলত সঞ্চয়পত্র থেকেই। দেরিতে হলেও সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় হাত বসাল সরকার।
অর্থনীতিবিদেরা দীর্ঘদিন থেকেই সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সরকার তাতে এত দিন কর্ণপাত করছিল না। এর আগে সঞ্চয়পত্রের ওপর উৎসে কর বাড়িয়ে জাতীয় সংসদে সরকারদলীয় সাংসদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল অর্থমন্ত্রীকে। তাই তিনি সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় হাত দিতে কালক্ষেপণই হয়তো করছিলেন। কারণ, সঞ্চয়পত্র সব শ্রেণির মানুষের কাছে বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় আর্থিক পণ্য। সেখানে হাত দিলে ঘরে ঘরে তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা ছিল। সে জন্য মুনাফায় হাত দেওয়ার আগে সঞ্চয়পত্রের কেনাবেচার ক্ষেত্রে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়। পাশাপাশি অনলাইন ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে। আবার একক ও যৌথ নামে সর্বোচ্চ কত টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে, তারও সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর এসে কমানো হলো মুনাফার হার।
এর আগে গত বছরের এপ্রিল থেকে ব্যাংকঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশে বেঁধে দেওয়া হয়। তার ধাক্কা এসে লাগে আমানতের সুদহারেও। কমতে কমতে গত জুলাই শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের গড় সুদহার নেমে আসে ৪ শতাংশে। এটিও গড় সুদহার। কোনো কোনো ব্যাংকে আমানতের সুদহার ২ শতাংশে নেমে গেছে। অন্যদিকে দেশে গড় মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৫ শতাংশের কাছাকাছি। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে ব্যাংকে টাকা রেখে সাধারণ মানুষ আসলে কোনো মুনাফা পান না। বরং টাকার মান কমে। এ অবস্থায় গত আগস্টে ব্যাংকের আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির ওপরে রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এখন সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমে যাওয়ায় নতুন করে আরও কিছু টাকা শেয়ারবাজারে ঢুকবে, এ কথা বলাই যায়। তাতে শেয়ারবাজার কোন উচ্চতায় যাবে, সেটি ভাবলে দুশ্চিন্তা জাগে মনে। বেশি লাভের আশায় ছুটে আসা মানুষগুলো শেষ পর্যন্ত আসল নিয়ে ফিরতে পারবেন তো?
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাস শেষে ব্যাংক খাতের বাইরে তথা মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২৭ হাজার ৪২ কোটি। জুন মাসেও মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৯ হাজার ৫১৭ কোটি। এক মাসের ব্যবধানে মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি। এ টাকার একটি অংশই ঘুরেফিরে সঞ্চয় হিসেবে আবারও ব্যাংকে ফেরার কথা। কিন্তু সুদের হার কমিয়ে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রে টাকা রাখতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তাহলে সাধারণ মানুষ টাকা রাখবে কোথায়?