এক বিসিএস চার বছরেও শেষ হয় না

বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা, হতাশ সরকারি চাকরিপ্রার্থীরা • ৩৩২ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করতে চেয়েছিল পিএসসি, বাস্তবায়ন হয়নি• পিএসসিতে নতুন চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগের পর আশাবাদী পরীক্ষার্থীরা

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। অন্তর্বর্তী সরকার বয়সসীমা ৩২ বছর করলেও তা প্রত্যাখ্যান করে ৩৫ দাবি করেছেন তারা। এ দাবির পেছনে তাদের প্রধান যুক্তি হলো—বিসিএসসহ সব সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা। সবশেষ সাতটি বিসিএসের দিকে তাকালে প্রার্থীদের এ দাবির সত্যতাও মেলে। সাধারণ প্রত্যেকটি বিসিএসের প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষ করতে সাড়ে তিন থেকে চার বছর সময় লেগে যায়। যারা চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন, তাদের গেজেট প্রকাশের জন্য আরও ছয়মাস থেকে এক বছর অপেক্ষা করতে হয়। অর্থাৎ, এক বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চার বছরের নিচে বিসিএসে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে পারছে না সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এক বছরে বিসিএস শেষ করার রোডম্যাপ করেও তাতে ব্যর্থ সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।

‘৪৬তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ হয়ে এখন লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু কবে লিখিত পরীক্ষা হবে, তা জানি না। দেরি হওয়ায় কিছুটা হতাশ। তবে পিএসসিতে যে পরিবর্তন এসেছে এতে খুশি।’-পরীক্ষার্থী শেফায়েত হোসেন

শিক্ষাবিদ ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় এক বছরে না হলেও ১৫ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে বিসিএস শেষ করা সম্ভব। এজন্য পিএসসিকে ঢেলে সাজাতে হবে। সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের দায়িত্বে এনে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কঠোর হওয়া জরুরি।

পিএসসির কর্মকর্তারা অবশ্য এ সংকটের পেছনে নিজেদের চেয়ে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে বেশি দায়ী করেছেন। তাদের ভাষ্য, বিসিএসে জট কাটাতে তারা একটি রোডম্যাপ করেছিলেন। জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সংঘাতসহ বিভিন্ন কারণে সেই রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা নিয়ে এখন নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে এ জট খুলতে চান তারা।

‘পিএসসি বহুবার বলে এসেছে তারা এক বছরে বিসিএস শেষ করবে। অথচ সময় নিয়েছে তিন থেকে চার বছর। এখন সব জায়গায় সংস্কার হচ্ছে। পিএসসিতেও নতুনরা দায়িত্বে এসেছেন। তাদের কাছে আমরা প্রত্যাশা করবো—যেন দ্রুত ৪৬তম বিসিএসের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষ করা হয়।’-পরীক্ষার্থী আতিকুল ইসলাম

প্রিলি-লিখিত-মৌখিক পরীক্ষায় সাড়ে ৩ বছর

পিএসসি সবশেষ যে পাঁচটি বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর সুপারিশ করেছে, তার মধ্যে তিনটি সাধারণ এবং দুটি বিশেষ। বিশেষ দুটি বিসিএস এক বছরের মধ্যে শেষ হলেও ভিন্নচিত্র দেখা গেছে সাধারণ তিন বিসিএসে।

৪০ ও ৪১তম বিসিএসে সময় লাগে ৪ বছরের বেশি

পিএসসির সবশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী—সাধারণ তিনটি বিসিএসের মধ্যে ৪০তম-তে চূড়ান্ত ফল প্রকাশে পিএসসির সময় লেগেছে তিন বছর ৬ মাস ২০ দিন। ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২০২২ সালের ৩০ মার্চ ৪০তম বিসিএসে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করে পিএসসি। এর সাত মাস পর একই বছরের ১ নভেম্বর এ বিসিএসে চূড়ান্ত নিয়োগের গেজেট প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ, বিজ্ঞপ্তি থেকে চূড়ান্ত নিয়োগ বা গেজেট প্রকাশের জন্য সময় লেগেছে চার বছর এক মাস ২০ দিন।

Leave a Reply

Translate »