একাধিক যৌন হেনস্তার অভিযোগ অনু মালিকের বিরুদ্ধে

হলিউড বা বলিউড সব জায়গায় কাজের জয় আসে যৌন হেনস্তার স্বীকার হয়েছেন অনেক নারী। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয় হ্যাশট্যাগ মিটু’ আন্দোলন। হ্যাশট্যাগ মিটু’ আন্দোলন শুরু হওয়ার পর জনপ্রিয় এই সুরকার, সংগীত পরিচালক ও সংগীতশিল্পীর বিরুদ্ধে প্রথম যৌন হেনস্তার অভিযোগ তোলেন সোনা মহাপাত্র ও শ্বেতা পণ্ডিত। তাঁরা দুজনই সংগীতশিল্পী। অনু মালিকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ করে সোনা মহাপাত্র বলেছেন,

‘লোকটি বিকৃত মানসিকতার।’ আর শ্বেতা পণ্ডিত বলেছেন, ‘২০০১ সালে আমার বয়স ছিল ১৫। স্টুডিওতে গান কণ্ঠে তোলার সময় অনু মালিক আমাকে কিস করার জন্য চাপ দেন।’

পিঙ্কভিলা’ গত বছরের ২১ অক্টোবর জানিয়েছে, যৌন হেনস্তার অভিযোগ ওঠার পর অনু মালিককে ‘ইন্ডিয়ান আইডল ১০’ প্রতিযোগিতার বিচারকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে অনুষ্ঠানটির আয়োজক সনি এন্টারটেইনমেন্ট টেলিভিশন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। তখন জানানো হয়, অনু মালিকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ প্রতিযোগিতার কোনো কাজের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না। আর অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এরপর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে অনু মালিক বলেছেন, ‘আমি সনি চ্যানেলে একটি বিবৃতি দিয়েছি। সেখানে বলেছি, আমি যেহেতু নিজের কাজে মনোযোগ দিতে পারছি না, তাই ইন্ডিয়ান আইডল থেকে অব্যাহতি নিচ্ছি।’

সনি এন্টারটেইনমেন্ট টেলিভিশন চ্যানেলে শুরু হয়েছে গান নিয়ে রিয়েলিটি শো ‘ইন্ডিয়ান আইডল ১১’। এই প্রতিযোগিতায় আবার বিচারক হয়েছেন অনু মালিক। সঙ্গে আছেন বিশাল দাদলানি ও নেহা কাক্কর। উপস্থাপনা করছেন আদিত্য নারায়ণ। বিচারক হিসেবে অনু মালিক আবার নিয়োগ পাওয়ায় খেপেছেন সোনা মহাপাত্র।

এদিকে অনু মালিকের বিরুদ্ধে নতুন করে যৌন হেনস্তার অভিযোগ সামনে এনেছেন বলিউডের আরেক সংগীতশিল্পী নেহা ভাসিন। গান গেয়ে এরই মধ্যে তিনি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড, জি সিনে অ্যাওয়ার্ড, ফেমিনা উইমেন অ্যাওয়ার্ড, স্টারডাস্ট অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য পুরস্কার জিতেছেন।

১৫ বছর আগের একটি ঘটনা সামনে এনে টুইটারে নেহা ভাসিন লিখেছেন, ‘তখন খুব স্ট্রাগল করছিলাম। আমার বয়স ছিল ২১। এক স্টুডিওতে আমার গানের একটি সিডি তাঁকে দিতে গিয়েছিলাম, আমার গান শুনে যদি তিনি একটু সুযোগ দেন। তখন অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। আমার সামনে সোফায় শুয়ে তিনি যে ধরনের কথা বলছিলেন, তাতে আমি অস্বস্তি বোধ করেছিলাম। তিনি আমার চোখ নিয়ে আপত্তিকর নানা মন্তব্য করেন। তখন তাঁর সামনে থেকে রীতিমতো আমাকে পালাতে হয়েছিল।’ অনু মালিককে নিয়ে তিনি আরও লিখেছেন, ‘এরপর তিনি মুঠোফোনে নিয়মিত নানা খুদে বার্তা পাঠাতেন, ফোন করতেন। আমি সেই সব ফোন কল রিসিভ করিনি, এমনকি কোনো খুদে বার্তার জবাব দিইনি।’

নেহা ভাসিনকে সমর্থন জানিয়েছেন সোনা মহাপাত্র। ‘ইন্ডিয়ান আইডল ১১’ প্রতিযোগিতায় বিচারকের আসনে অনু মালিককে দেখে আবার তিনি সরব হয়েছেন। এবার তাঁকে থামানোর জন্য তাঁর স্বামী রাম সম্পতকে ফোন করেছেন আরেক জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সোনু নিগম। সোনা মহাপাত্রকে এ ব্যাপারে আর কোনো কথা না বলার জন্য তিনি চাপ দিয়েছেন।

এর আগে আরও দুজন নারী অনু মালিকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ তুলেছেন। ‘মিড-ডে’ পত্রিকায় তাঁরা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে তাঁরা নিজেদের নাম ও পরিচয় গোপন রেখেছেন। অনু মালিক তাঁদের নানাভাবে যৌন হেনস্তা করেছেন।

মাসালা ডটকমের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, অনু মালিকের বিরুদ্ধে ১৯৯৬ সালে আরেক জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আলিশা চিনয় যৌন নির্যাতনের মামলা করেন। তিনি একই মামলায় ২৬ লাখ ৬০ হাজার রুপি দাবি করেন। ওই সময় আলিশা চিনয়ের বিরুদ্ধে অনু মালিকও আরেকটি মামলা করেন। সেই মামলায় দুই কোটি রুপি ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়।

Leave a Reply

Translate »