আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃ দিন-রাত প্রতিদিন পাঁচবার সুললিত কণ্ঠে ভেসে আসে আজানের সুমধুর আওয়াজ। মুগ্ধকর সেই সুরলহরি মুমিনের চিত্তকে নির্মোহ আনন্দিত করে তোলে। মুয়াজ্জিনের এই সুমধুর আওয়াজ আমাদের প্রতিদিনই বার্তা দিয়ে যায় মহান প্রভুর। নামাজের সময় বারবার আজানের শব্দগুলো উচ্চারিত করার দ্বারা মুমিনের অন্তর জাগিয়ে তোলা হয়।
আল্লাহু আকবার। আল্লাহ সবচেয়ে বড়-এর দ্বারা মুমিনকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় আল্লাহর বড়ত্ব, সম্মান ও মর্যাদার কথা। পৃথিবীতে যত পরাশক্তি আছে আমাদের চারপাশে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান-সব কিছুই আল্লাহর সামনে একদম তুচ্ছ; আল্লাহ মহান। এমন সত্তা, যার ক্ষমতার ওপর আর কারো ক্ষমতা নেই, যার শাস্তির ওপর আর কারো শাস্তি নেই। শব্দটি চারবার উচ্চারণ করে এই দিকে ইঙ্গিত প্রদান করা হচ্ছে যে গ্রহে শক্তিশালী উপাদান মোট চারটি-আগুন, পানি, মাটি, বাতাস। এ সব কিছু থেকেই আল্লাহ মহান, আল্লাহই বড়।
আজানে ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলে শাশ্বত সুন্দর, চিরন্তন সফলতার দিকে আহবান করা হয় সবাইকে, যা সাদা-কালো, কৃষক-শ্রমিক সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে মহান প্রভুর কুদরতি চরণে। স্বয়ং আল্লাহ যেন আপনাকে সফলতার দিকে আহবান করছে। অবাধ্য এক দাস, যে হাজারো পাপের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে, তাকে প্রকৃত সফলতার দিকে ডাকা হচ্ছে। যেমন-আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনরা সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের নামাজে বিনম্র।
পুনরায় আবার আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনা করার জন্য ‘আল্লাহু আকবার’ বলে আহবান করা হয়।
আজানের বাক্যগুলো শেষ করা হয় ‘তাওহিদের কলেমা’ দ্বারা। এর দ্বারা আবারও মুমিনকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তাঁর কাছেই তোমাকে ফিরে আসতে হবে। সুতরাং তাঁর নির্দেশিত বিধানকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট থেকো।
ইমাম নববী (রহ.) বলেছেন, আজানের শব্দগুচ্ছ দিয়ে চারটি জিনিস প্রকাশ করা হয়। ১. ইসলামের প্রতীক-তাওহিদের কলেমা। ২. নামাজের সময় হয়ে যাওয়া। ৩. নামাজের স্থান। ৪. জামাতের দিকে আহবান।
কোনো ব্যক্তি যদি গভীরভাবে চিন্তা করে, তাহলে সে আজানের মধ্যে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো খুঁজে পাবে। এ জন্য রাসুল (সা.) আজানের জবাব দেওয়ার জন্য বলেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা যখন মুয়াজ্জিনকে আজান দিতে শুনবে, তখন তিনি যা বলবেন তোমরা তা-ই বোলো। অতঃপর আমার ওপর দরুদ পাঠ কোরো। কেননা যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। অতঃপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ‘অসিলা’ প্রার্থনা কোরো। কেননা অসিলা জান্নাতের একটি সম্মানজনক স্থান। এটা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একজনকেই দেওয়া হবে। আমি আশা করি, আমিই হব ওই বান্দা। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আমার জন্য অসিলা প্রার্থনা করবে তার জন্য আমার শাফাআত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
আসুন, প্রতিবার ভিন্নভাবে, নতুন প্রেরণায়, নতুন ভাবনা নিয়ে আজান শুনি। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।