যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর বৈমানিকরা আকাশে যেসব ‘আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট’ (ইউএফও) বা ‘অচেনা উড়ন্ত বস্তুর’ মুখোমুখি হয়েছেন সে বিষয়ে তাদের কাছে কোনো ব্যাখ্যা নেই
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর ইউএফও সংক্রান্ত যে নথি প্রকাশ করে, সেখানে তারা এ কথা জানিয়েছে।
নথিতে বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত তথ্যউপাত্ত না থাকায় প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞরা সামরিক বাহিনীর বৈমানিকদের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়া এইসব রহস্যজনক উড়ন্ত বস্তু সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি যে, এগুলো আদৌ পৃথিবীর কোনো উন্নততর প্রযুক্তি, নাকি বায়ুমণ্ডলে বিচরণ করা বা পৃথিবীর বাইরের কোনো কিছু।
রয়টার্স জানিয়েছে, কংগ্রেসের কাছে জমা দেওয়া এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা এই প্রতিবেদনে ২০০৪ সাল থেকে ১৪৪টি পর্যবেক্ষণের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, যেগুলোকে সরকারি ভাষ্যে ‘অজ্ঞাত আকাশমণ্ডলীয় ঘটনাবলী’ বা ইউএপি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের দপ্তর ও যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর নেতৃত্বে থাকা ইউএপি টাস্ক ফোর্সের যৌথ উদ্যোগে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদরদপ্তর পেন্টাগনের প্রকাশ করা ইউএপি সম্পর্কিত বেশকিছু ভিডিওচিত্রও প্রতিবেদনটিতে জায়গা পেয়েছে। ওইসব ভিডিওতে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর বৈমানিকরা ফ্লাইট পরিচালনার সময় দেশের পশ্চিম ও পূব উপকূলের আকাশসীমায় রহস্যময় আকাশযান দেখতে পান, যেগুলো ছিলো খুবই গতিশীল ও দিক পরিবর্তনে দক্ষ এবং তাদের এই ক্ষমতা প্রচলিত আকাশ চলাচল প্রযুক্তির সীমার বাইরে ছিল।
পৃথিবীর বাইরের কোন আকাশযান হতে পারে কিনা- এমন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “পৃথিবীর বাইরের প্রাণীদের অনুসন্ধান বা এ সংক্রান্ত মূল্যায়ন করা টাস্ক ফোর্সের উদ্দেশ্য না। এসব কাজের জন্য আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।”
তিনি বলেন, “যে ১৪৪টি পর্যবেক্ষণের ঘটনা প্রতিবেদনটিতে তুলে ধরা হয়েছে সেখানে আমাদের কাছে এমন কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলেনি যেখানে এগুলোর কোনো পার্থিব ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। তবে তথ্যউপাত্ত আমাদের যেদিকে নিয়ে যাবে আমরা সেদিকেই যাব।”
আরেক কর্মকর্তা জানান, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা পর্যবেক্ষণগুলোর মধ্যে মাত্র একটি ঘটনাকে ‘বায়ুবাহিত বিশৃঙ্খলা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, বাকিগুলো ব্যাখ্যাতীত রয়ে গেছে এবং এগুলো নিয়ে আরও গবেষণা দরকার।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাকি ১৪৩টি পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পৃথিবীর বাইরের কোনো কিছু দেখা যাওয়ার সম্ভাবনাটি বাতিল করা হয়নি।
একইসঙ্গে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে টাস্ক ফোর্স এটাও নিশ্চিত করতে পারেনি যে, এটা যুক্তরাষ্ট্রের সরকার, বিদেশি শক্তি বা বাণিজ্যিক কোনো প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবন করা কোনো বিশেষায়িত আকাশ প্রযুক্তি কিনা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার আকাশে এসব রহস্যজনক বস্তুর বিচরণের ঘটনাবলীকে ‘অচেনা উড়ন্ত বস্তু’ বা ইউএফও না বলে ইউএপি বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ ইউএফওকে দীর্ঘদিন ধরেই ভিনগ্রহের নভোযানের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের দাবির প্রেক্ষাপটেই ইউএপি সংক্রান্ত এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে, যা গত ডিসেম্বরে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সই করা বিস্তৃত গোয়েন্দা তথ্য সম্পর্কিত আইনের অংশ। সিনেটর মার্কো রুবিও এই প্রতিবেদন প্রকাশে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের জন্য একটি ঘুরে দাঁড়ানোর অবস্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে কারণ ১৯৪০ এর দশক থেকে সেদেশের সামরিক বাহিনী অচেনা উড়ন্ত বস্তু এবং ‘ফ্লাইং সসার’ সম্পর্কিত পর্যবেক্ষণ ও দাবিগুলো নাকচ করে আসছিল।
তবে এই বিষয়ে এটাই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন না। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী অতীতে ইউএফও বিষয়ে তদন্ত করতে প্রজেক্ট ব্লু বুক নামের একটি কর্মসূচি পরিচালনা করে, যা শেষ হয় ১৯৬৯ সালে। ওই তদন্তে ১২ হাজার ৬১৮টি ঘটনা তালিকাভুক্ত করা হয়, যেখানে ৭০১টি বস্তু দেখা গেছে, যা সরকারি ভাষ্যে ‘অজ্ঞাত’ হিসেবেই থেকে গেছে।