আমি বাংলার, আমি বাঙালির’: বিদ্যা

বাংলা গান গাইলেন। বাংলায় কথাও বললেন। আর হাসতে হাসতে দাবি করে বলিউড অভিনেত্রী বিদ্যা বালান বললেন— আমি বাংলার, বাঙালির। নানা কাজে নানাভাবে তাই বাংলা যোগ।

ঘটনা ২০০৩ সালের। প্রয়াত পরিচালক গৌতম হালদারের ছবি ‘ভালো থেকো’র নায়িকা বিদ্যা বালান। তার আগে একগুচ্ছ দক্ষিণী ছবিতে ডাক পেয়েও বাতিল করে দেন তিনি। সেই নায়িকা বিনোদন দুনিয়ায় মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন। 

আনন্দবাজার প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, কলকাতা তার প্রিয়। তিনি কলকাতাকে মন থেকে ভালোবাসেন। কোনো শিকড়ের টান ছাড়াই গতকাল শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) কলকাতা শহরে পা রেখেছিলেন বলিউড অভিনেত্রী বিদ্যা বালান। পরনে ছিল লাল-কালো বোমকাই শাড়ি। প্রায় কাঁধছোঁয়া লম্বা ঝুমকো দুল, আর হাতখোঁপায় ফুল। ছোট্ট টিপ, হালকা লিপস্টিক, আর কাজলে বিদ্যা সত্যিই বাঙালিনী। সেই কথা তাকে জানাতেই আরও একপ্রস্ত ঝলমলিয়ে উঠলেন। তিনি বললেন, আমি বাংলার, বাঙালির। আমার নানা কাজে নানাভাবে তাই বাংলা-যোগ। 

এখানেই থামেননি। বাংলায় কথা বলেছেন। গানও গেয়েছেন উপস্থিত সাংবাদিকদের অনুরোধে—’তোমাতে আমাতে দেখা হয়েছিল’। রাহুল দেব বর্মনের গাওয়া গানটি তার গলায় যেন আলাদা মাত্রা পেয়েছিল। এরপরেই মুখ মেঘলা তার। অভিনেত্রী বললেন, তার পরনের শাড়িটি প্রথম পরিচালক প্রয়াত গৌতম হালদারের দেওয়া। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত প্রয়াত পরিচালকের কন্যা রাইপূর্ণা হালদার। বিদ্যা তার দিকে ইশারায় দেখিয়ে যেন ছুঁয়ে যেতে চাইলেন ফেলে আসা সেই মুহূর্ত। 

তিনি বলেন, দাদার এই শাড়িটা আমার খুব পছন্দের। আমার প্রথম ছবির পরিচালকের দেওয়া উপহার। যত্ন করে রেখে দিয়েছি। কলকাতায় আসছি। গৌতম দাকে নিয়ে কথা বলব। তাই শাড়িটা পরে এলাম। শুধুই শাড়ি পরা নয়, দাদাকে স্মরণ করে দুই মিনিটের নীরবতাও পালন করেছেন বিদ্যা। প্রিয় পরিচালককে নিয়ে কথা বলতে বলতে চোখ ভিজেছে তার।

বিদ্যা জানিয়েছেন, একের পর এক দক্ষিণী ছবি বাতিল হচ্ছে। তার হাতে কাজ বলতে কয়েকটি বিজ্ঞাপনী ছবি। অনেকেই তাকে দেখে বলতেন, ছবিতে নেবেন। কিন্তু কথা রাখতেন না। সেই সময় গৌতম হালদার তাকে ‘ভালো থেকো’ ছবির জন্য বেছেছিলেন। প্রথম দিনের শুটিংয়ে বিপরীতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়! না, ভয় পাননি। কারণ পরিচালক তাকে খুব সুন্দর করে ‘আনন্দী’ চরিত্রটি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। তবে ‘জ্যাঠামশাই’ উচ্চারণ করতে গিয়ে বার কয়েক হোঁচট খেয়েছিলেন। দেখে প্রয়াত অভিনেতার পরামর্শ— অভিনেত্রী চাইলে ‘জেঠু’ বলতে পারেন। বিদ্যা হাসতে হাসতে বললেন, আমি অবশ্য ‘জ্যাঠামশাই’-ই বলেছিলাম। তবে সৌমিত্র জেঠুর সহযোগিতার মনোভাব খুব ভালো লেগেছিল।

বিদ্যার দ্বিতীয় ছবি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পরিণীতা’। পরিচালক প্রদীপ সরকার। তার পরে সুজয় ঘোষের ‘কাহানি’। সেখানে পরিচালক থেকে সহ-অভিনেতারা বাঙালি। কলকাতায় লম্বা শুটিং। আবার তার সাম্প্রতিক ব্লকবাস্টার ‘ভুলভুলাইয়া ৩’-এ তিনি ‘মঞ্জুলিকা’। বিদ্যার মা অবাক হয়ে বলেন, কেন এত বাংলা যোগ! কীভাবে ঘটে তোমার সঙ্গে? কেনই বা ঘটে?

 জবাব নেই বিদ্যার কাছে। তিনি কেবল বোঝেন, বাংলার সঙ্গে কিছু তো সম্পর্ক আছে তার! হয়তো ‘পূর্বজন্মের টান’। বিজ্ঞাপনী ছবি করার সময়েই শুনেছিলেন— তিনি নাকি মাধবী মুখোপাধ্যায়ের মতো দেখতে। বিদ্যা অবশ্য ভাবেননি, তিনি অভিনয়ে আসবেন। কোনো প্রশিক্ষণ নেননি। চিত্রনাট্য খুঁটিয়ে পড়ার অভ্যাস তার আছে। আর পরিচালকের নির্দেশ পালন করেন। তবে শাবানা আজমি, শ্রীদেবী আর মাধুরী দীক্ষিতকে দেখতে দেখতে একসময় অভিনয়ের ইচ্ছা জাগত।

এই আফসোস অবশ্য অভিনেত্রীরও। তিনি বলেন, আমি তো করতেই চাই। কিন্তু কেউ আমাকে আর ডাকেন না! কৌতুক ছবি করার খুব শখ। সেটিও পাচ্ছি না। যদিও সাম্প্রতিক কোনো বাংলা ছবি তার দেখা হয়নি। তবে পেশার তাগিদে তাকে প্রায়ই সফর করতে হয়। সেই সময় মুঠোফোনে যা পান, তা-ই দেখেন তিনি। তার প্রথম পছন্দ যদিও প্রেক্ষাগৃহে বসে ছবি দেখা। একসঙ্গে অনেকের সঙ্গে বসে যদি ছবি না-ই দেখলাম, তা হলে মজা কোথায়? প্রশ্ন অভিনেত্রীর।

রুপালি পর্দা যার শ্বাসে-প্রশ্বাসে, সেই বিদ্যা কি কোনো দিন পরিচালনায় আসবেন?—এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। শাড়ি সামলে মঞ্চছাড়ার আগে এক গাল হেসে বিদ্যা বললেন, আমার মধ্যে অত প্রতিভা নেই। সবাই সব পারে না। আমি কেবল অভিনয়টাই পারি। পরিচালনা, প্রযোজনা— কিছু করব না। আজীবন অভিনয় করে যেতে চাই।

Leave a Reply

Translate »