দেশে করোনার কারণে সরকারি চাকরিতে প্রবেশে ২১ মাস বয়স ছাড় দেয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তাতে জানা গেছে, বিসিএসের জন্য এই বিশেষ ছাড় নেই। এমন প্রেক্ষাপটে নতুন দাবি নিয়ে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। রাজধানীর শাহবাগে ২৭ আগস্ট এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
শনিবার (২১ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরবেন মহাসমাবেশ ঘোষণাকারীরা।
এর আগে সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ২৫ মার্চ যাদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বছর পার হয়েছে, তারা ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে চাকরির আবেদন করতে পারবেন। তাদের বয়সসীমা এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুননির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে তারা ২১ মাস ছাড় পাচ্ছেন। তবে প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, এই সুবিধা বিসিএস ব্যতীত।
দেশে চাকারিপ্রার্থীদের জন্য বিসিএস সবচেয়ে আকর্ষণীয়। তাই বিসিএস এই সুবিধার বাইরে থাকায়, তারা হতাশ হয়েছেন। তাদের হতাশার আরো অনেক দিক রয়েছে। তাদের কথা হলো, এই ২১ মাসের সুবিধা পাবেন গড়ে দুই-তিন ভাগ। কারণ করোনায় প্রাথমিক থেকে সব পর্যায়ের শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু যার চাকরির বয়স জুলাই মাসে শেষ হয়েছে তিনি পাবেন পাঁচ মাসের সুবিধা। আবার যার চাকরির বয়স নভেম্বরে শেষ হবে তিনি পাবেন এক মাসের সুবিধা। তাদের দাবি, এই রেয়াত না দিয়ে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়িয়ে ৩০ থেকে ৩২ করা হোক। এটা কেউ কেউ ৩৫ করারও দাবি করছেন।
এই দাবি আদায়ে তারা ২১ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন ও ২৭ আগস্ট শাহবাগে মহাসমাবেশের কর্মসূচিও দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স ৩০ বছরই ঠিক আছে। শুধু করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্তদের বিসিএস ছাড়া প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছে অন্য ক্ষেত্রে।
‘চাকরিপ্রত্যাশী যুব প্রজন্ম’-এর আহ্বায়ক মানিক হোসেন রতন বলেন, করোনায় সব শ্রেণীর ছাত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সবার জীবন থেকে দুই বছর চলে গেছে। তাদের সংখ্যা ৫০-৬০ লাখ। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত যাদের বয়স ২৫ থেকে ২৭। কিন্তু সরকারের ঘোষিত ২১ মাসের সুবিধা পাবে শতকরা দুই-তিন ভাগ।
তিনি বলেন, সরকারি চাকরি মোট চাকরির মাত্র ১৬ ভাগ। বেসরকারি চাকরিতে এই বয়সের এই ছাড় পাওয়া যাবে কি না তাও স্পষ্ট নয়। আর বিসিএস বাইরে রাখা হয়েছে এই যুক্তিতে যে করোনার মধ্যে প্রতিবছরই একটি করে বিসিএস পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ২০১৯ সালের পরীক্ষা হয়েছে এ বছর। একটি বিসিএস পরীক্ষা পুরো শেষ করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে তিন বছর লাগে।
তিনি বলেন, করোনার সময় সাড়ে চার লাখের মতো চাকরিপ্রার্থী তাদের বয়স হারিয়েছেন। তাদের ১৫-১৬ ভাগেরও বেশি ২১ মাসের সুবিধা পাবেন না। তারাই পুরো সুবিধা পাবেন, যাদের বয়স ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ৩০ বছর পার হয়েছে। তাই চাকরির বয়স বাড়িয়ে ৩২ বছর করার কোনো বিকল্প নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে মাস্টার্স করা অক্ষয় কুমার রায় বলেন, ‘আমার বয়স ৩০ বছর হবে সেপ্টেম্বর মাসে। তাই আমি ২১ মাস নয়, তিন মাসের সুবিধা পাবো। কিন্তু সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়িয়ে যদি ৩২ করা হয় তাহলে সবাই সমান সুবিধা পেতেন। সরকারের এই সিদ্ধান্তে বেশিরভাগ চাকরিপ্রার্থী সুফল পাবেন না।’
তিনি আরও বলেন, করোনার সময় ১৪ ভাগের মতো চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে। সেখানেও আমরা বঞ্চিত হয়েছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ২১ মাস নয়, সরকারের উচিত করোনা যতদিন থাকবে, ততদিন বয়সের একটা রেয়াত দেয়া। তার জন্য একটি পদ্ধতি বের করা দরকার। আর বেসরকারি চাকরিতে ৩০ বছর বয়সসীমা নির্ধারিত না থাকলেও যারা এটা ফলো করেন, তাদের জন্যও একই ধরনের নির্দেশনা প্রয়োজন। করোনার মধ্যে প্রতিবছর একটি বিসিএস হয়েছে। তারপরও একই বয়স-সুবিধা সেখানেও থাকা উচিত।
এ প্রসঙ্গে পিএসসির সদস্য শাহজাহান আলী মোল্লা বলেন, এ বছর পাবে না। আগামী বছর বিসিএসে বয়সের সুবিধা পাবে। আমরা এ বছর তো আগেই নিয়োগ পরীক্ষার সার্কুলার দিয়ে ফেলেছি। তাই এই বয়স রেয়াতের সুবিধা দেয়া হয়নি। এ বছর একটি সার্কুলার তো হয়েছে। বছরের শেষের দিকে আরেকটি হবে। তখন আশা করছি করোনার কারণে বয়সের সুবিধা দেয়া হবে। হয়ত সুবিধা পাবে। আমাদের কাছে সরকারের চিঠিটি এখনো আসেনি। আসার পর দেখবো কী করা যায়। সূত্র : ডয়েচে ভেলে।