আইকোনিক ফোকাস ডেস্কঃকিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানার পর্দায় কখনও লাজুক লাস্যময়ী প্রেমিকা, কখনও গ্রামের বধূ, কখনও স্নেহময়ী ভাবি, কখনও মমতাময়ী মা রুপে ধরা দিয়েছেন। একজন বাঙালি নারীর শাশ্বত রূপ দর্শক তার মধ্যেই দেখেছেন রুপালি পর্দায়। চার দশকের অভিনয় জীবনে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। পর্দায় অভিনেত্রী হাসলে যেন দর্শকের হৃদয়ে ভালোলাগার অনুরণন ছড়িয়ে পড়ত, আবার কাঁদলে যেন দর্শকও কাঁদত- এমন দৃশ্য অনেকবারই দেখা গেছে।
গ্ল্যামার, বিউটি অ্যান্ড পার্সোনালিটি এই তিনের সমন্বয় অভিনেত্রী শাবানা অভিনয় অনন্য। আজ (১৫ জুন) এই কিংবদন্তি অভিনেত্রীর জন্মদিন। তিনি জন্ম গ্রহন করেন ১৯৫২ সালের এই দিনে ।অভিনেত্রী শাবানার আসল নাম আফরোজা সুলতানা রত্না। চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে তার জন্ম। তবে বড় হইছেন ঢাকাতেই।তিনি অভিনয় শুরু করেন মাত্র ১০ বছর বয়সে ১৯৬২ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে। প্রথম কাজ করা সিনেমার নাম ছিল ‘নতুন সুর’।
কিংবদন্তি নির্মাতা এহতেশাম ছিলেন শাবানার চাচা। তার মাধ্যমেই সিনেমায় আসেন তিনি। ১৯৬৭ সালে এহতেশাম পরিচালিত উর্দু সিনেমা ‘চকোরী’তে কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। এই সিনেমাতেই রত্না থেকে তার নাম শাবানা রাখেন এহতেশাম।
দীর্ঘ ঝলমলে ক্যারিয়ারে শাবানা অভিনয় করেছেন প্রায় ৩০০ সিনেমায়। এর মধ্যে রয়েছে বহু দর্শকনন্দিত, ব্যবসাসফল সিনেমা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘ভাত দে’, ‘অবুঝ মন’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘সত্য মিথ্যা’, ‘রাঙা ভাবি’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘ওরা এগারো জন’, ‘বিরোধ’, ‘আনাড়ি’, ‘সমাধান’, ‘জীবন সাথী’, ‘মাটির ঘর’, ‘লুটেরা’, ‘সখি তুমি কার’, ‘কেউ কারো নয়’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘স্বামী কেন আসামি’, ‘দুঃসাহস’, ‘পুত্রবধূ’, ‘আক্রোশ’ ও ‘চাঁপা ডাঙার বউ’ ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: মারা গেছেন সংগীতশিল্পী সারদা রাজন আয়েঙ্গার
শাবানাকে বলা হয় বাংলাদেশের সিনেমায় সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী।অনবদ্য অভিনয়ে দর্শকদের যেমন মুগ্ধ করেছেন, তেমনি পুরস্কারের পাল্লাও ভারী করেছেন শাবানা। কেবল অভিনেত্রী হিসেবেই তিনি ৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া প্রযোজক হিসেবে একবার এবং সর্বশেষ আজীবন সম্মাননাও পেয়েছেন এই নন্দিত অভিনেত্রী। জাতীয় পর্যায়ে এত বেশি পুরস্কার আর কোনো অভিনেত্রী অর্জন করতে পারেননি।
এ ছাড়াও তিনি প্রযোজক সমিতি পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, আর্ট ফোরাম পুরস্কার, নাট্যসভা পুরস্কার, কামরুল হাসান পুরস্কার, নাট্য নিকেতন পুরস্কার, ললিতকলা একাডেমি পুরস্কার ও কথক একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে শাবানা বিয়ে করেছেন ওয়াহিদ সাদিককে। তাদের বিয়ে হয় ১৯৭৩ সালে। তাদের ঘর আলো করে আসে দুটি কন্যা ও একটি পুত্রসন্তান। সংসার সামলেও সিনেমায় একের পর এক চমক দেখিয়েছেন শাবানা। কিন্তু ১৯৯৭ সালে অজানা কারণে আচমকা ঢালিউড থেকে বিদায় নেন শাবানা। এরপর ২০০০ সালে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে চলে যান। বর্তমানে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করেন এই ঢালিউড কন্যা।